রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: মার্চ ৩, ২০২৫, ০৩:২০ পিএম

হারিয়ে গেছে গ্রামীণ ঐতিহ্য ‘ধানের গোলা’

চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: মার্চ ৩, ২০২৫, ০৩:২০ পিএম

হারিয়ে গেছে গ্রামীণ ঐতিহ্য ‘ধানের গোলা’

ধানের গোলাঘর। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে গেছে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধানের গোলা। এক সময় গেরস্থের বাড়িতে ধানের গোলা ছিল। ‘গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু আর পুকুর ভরা মাছ’। প্রচলিত প্রবাদটি আজও মানুষের মুখে শোনা যায়। কিন্তু গ্রামের পর গ্রাম ঘুরেও দেখতে পাওয়া যায় না বাংলার ঐতিহ্যবাহী ধানের গোলা। ধান ছাড়াও রাখা হতো চাল, গম ভুট্টাসহ নানা খাদ্যশস্য।

মাঠের পর মাঠ ধানক্ষেত থাকলেও উপজেলার অধিকাংশ কৃষকের বাড়িতে এখন নেই ধান, গম মজুত করে রাখার বাঁশ-বেত ও কাদা দিয়ে তৈরি গোলাঘর। এ উপজেলার বেশির ভাগ মানুষের প্রধান পেশা কৃষি। একসময় এখানে সমাজের নেতৃত্ব নির্ভর করত কার কয়টি ধানের গোলা আছে। এই হিসাব কষে কন্যা পাত্রস্থ করতেও বর পক্ষের বাড়ি থেকে ধানের গোলার খবর নেওয়া হতো। যা এখন রূপকথা।

গ্রামাঞ্চলে বাড়িতে বাড়িতে বাঁশ দিয়ে গোল আকৃতির তৈরি করা ধানের গোলা বসানো হতো উঁচুতে। গোলা নির্মাণ করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় আগে দক্ষ শ্রমিক ছিল। এখন আর গোলা নির্মাণ শ্রমিকদের দেখা মেলে না।

পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন তারা। গ্রাম-গঞ্জে দক্ষ কারিগরদের হাতে তৈরি বাঁশের ধানের গোলা এক সময় গ্রামীণ জনপদে ব্যাপক চাহিদা থাকলেও কালের বিবর্তনে তা বিলুপ্তির পথে।

মানুষের জীবন-মানের পরিবর্তনের ফলে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে তাদের পারিবারিক ব্যবহার্য উপকরণে। ফলে ঐতিহ্যবাহী বাঁশের ধানের গোলার জায়গা দখল করে নিয়েছে পাটের বস্তা আর টিন বা প্লাস্টিকের তৈরি ড্রাম। এগুলো তৈরি ঝামেলামুক্ত ও সহজে বাজারে পাওয়া যায় বলে মানুষ বাঁশের গোলার পরিবর্তে এসব আধুনিক উপকরণ ব্যবহারে দিন দিন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশের গোলার কদর।

সরেজমিনে চারঘাটের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে জানা গেছে, গ্রামাঞ্চলে বাড়িতে বাড়িতে বাঁশ দিয়ে গোল আকৃতির তৈরি করা ধানের গোলা বসানো হতো উঁচুতে। গোলার মাথায় থাকত টিনের বা খড়ের তৈরি পিরামিড আকৃতির মতো ছাউনি। গোলা নির্মাণ করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় আগে দক্ষ শ্রমিক ছিল। 

গ্রামাঞ্চলে বাড়িতে বাড়িতে বাঁশ ফাটিয়ে ও কঞ্চি দিয়ে প্রথমে গোল আকৃতির কাঠামো তৈরি করা হতো। এরপর তার গায়ের ভেতরে বাইরে মাটির আস্তরণ লাগানো হতো। এর মধ্যে প্রবেশপথ রাখা হতো। যাতে করে প্রয়োজনে ধান রাখা বা বের করা যায়। মাটির তৈরি গোলাতে ধান ভালো থাকে। একটি গোলায় বছরের অধিক সময় পর্যন্ত ৫০০-৬০০ মণ ধান ভালোভাবে সংরক্ষণ করা যায়।

৭৬ বছর বয়সী মরিয়ম বিবি বলেন, আমাদের সময় প্রায় সব বাড়িতে ধানের গোলাঘর ছিল। সারা বছর গোলা থেকে ধান বের করে তা সিদ্ধ ও শুকানোর পর ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে চাল বানাতাম। এখন তা করতে হয় না। মিল-কারখানা আর চাতালেই এ কাজ হয়।

কৃষক লোকমান হোসেন বলেন, কালের বিবর্তনে ধানের গোলা আজ বিলুপ্ত। আশির দশকের দিকে ওই সব ধানের গোলা কৃষক ও সাধারণ মানুষ ব্যবহার করতো। এখন এসব আর হয় না, আধুনিকতার ছোঁয়ায় সব হারিয়ে যাচ্ছে।

বলা যায়, এই বাঁশের তৈরি ধানের গোলা আমাদের দেশের পুরাতন একটি ঐতিহ্য। যা আগামী প্রজন্মের কাছে গোলাঘর একটি স্মৃতিতে পরিণত হয়েছে।
 

আরবি/এসএমএ

Link copied!