ঢাকা মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ, ২০২৫

গড়াই নদীতে ভেসে উঠছে কুমির: আতঙ্কে এলাকাবাসী

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৫, ১১:১৪ এএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বুক চিরে বয়ে যাওয়া নদীগুলোর মধ্যে একটি বড় নদী গড়াই। এ নদীর খুলুমবাড়িয়া, মাদলা এলাকায় ৪টি কুমির ভেসে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে বিগত ৩ মাস ধরে। এ ঘটনায় নদীপাড়ের জেলে ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

স্থানীয়রা জানান, কুমিরের আকার ৭ থেকে ৮ হাতের মতন হবে, সাথে রয়েছে আরও ৩টি বাচ্চা।

উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের খুলুমবাড়ি গ্রামের ঘাট এলাকা ঘুরে জানা যায়, গড়াই নদীতে পানি কমে যাওয়ায় হরহামেশাই দেখা মিলছে কুমিরের। এই এলাকায় ৩-৪টি কুমির বিচরণ করছে বলে স্থানীয়রা জানান। কুমির দেখতে নদী পাড়ে ভিড় করছে স্কুলশিক্ষার্থী ও বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দর্শনার্থীরা। নদীতে মানুষ ও গরু ছাগলের গোসল করাতে দেখা যায়নি। এ ঘটনায় নদী পাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

জেলেরা নদীতে মাছ শিকার করছে সতর্কতা অবলম্বন করে। এদিকে উপজেলার খুলুমবাড়িয়া, মাদলা, শাহবাড়িয়া, গাংকুলা, চরপাড়া, নলখোলাসহ কয়েক গ্রামের নদী পাড়ের বাসিন্দাদের কুমির আতঙ্কে দিন কাটছে।

শৈলকুপার খুলুমবাড়িয়া খেয়া ঘাটের মাঝি চম্বক কুমার দাস বলেন, ৩ মাস ধরে নদীতে কুমির দেখে আসছি । একটি বড় কুমির ও সাথে তিনটি ছোট কুমির। তিনি বলেন, রোববার সকালে গড়াই নদীতে কিছু যুবক ড্রোন উড়িয়ে বড় একটি কুমির ভাসতে দেখেছে এবং ভিডিও ধারণ করেছে। 

মাঝি আরও বলেন, স্থানীয় প্রশাসন কুমিরগুলো উদ্ধার করতে না পারলে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

মাদলা গ্রামের মৎস্যজীবী ওলিয়ার মোল্যা বলেন, এর আগে কোনো দিন নদীতে কুমির দেখা যায়নি। রোববার নদীতে খেয়া নৌকা করে মাছ ধরতে গেলে ৮ থেকে ১০ হাত দূরে কুমির দেখতে পাই। এ সময় বৈঠা দিয়ে তার পিঠের ওপর আঘাত করলে কুমিরটি সরে যায়। পরে সেখান থেকে দ্রুত চলে আসি। 

তিনি আরও বলেন, কুমিরের আকার হবে ৮ থেকে ৯ হাত। পিঠের ওপর সেওলা জমে আছে।

মাদলা এলাকার হুসাইন জানান, কিছুদিন আগে জালে একটি কুমির জড়িয়ে পরে তা জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে যায়।

খুলুমবাড়ি গ্রামের আছালত মোল্যা বলেন, তিন মাস ধরে নদীতে কুমির আতঙ্কে আছেন তারা। দিনে ৪ বার কুমির ভেসে ওঠে। একটি অনেক বড় আর তিনটি খুব সম্ভব তার বাচ্চা। তার দাবি প্রশাসন কুমির ৪টি উদ্ধার করে নদী পাড়ের মানুষদের আতঙ্ক দূর করবেন।

ঝিনাইদহ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ফরহাদুর রেজা বলেন, গড়াই নদীতে কুমিরের কোনো ইতিহাস নেই। তিনি এখন পর্যন্ত শোনেননি গড়াই নদীতে কুমিরের কথা। যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে বন বিভাগের মাধ্যমে তা উদ্ধার করে কুমির প্রজনন কেন্দ্রে অবমুক্ত করতে হবে।

ঝিনাইদহ বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, শুনেছি গড়াই নদীর কুমিরের কথা। যদি সত্যি হয়ে থাকে তবে পরিবেশের জন্য খুশির খবর। নদীতে কুমির থাকবে, মাছ থাকবে, জীববৈচিত্রের আরও অনেক কিছু থাকবে। এটা আগে ছিল। আমরা আশা করি নদী নালার আগের রূপ ফিরে আসুক। 

বন বিভাগ থেকে সেখানে লোকবল পাঠানো হয়েছে। তার ধারণা,  হয়তো বর্ষা মৌসুমে কুমিরগুলো এসেছিল। উপযুক্ত পরিবেশের জন্য আর ফিরে যায়নি। নদী পাড়ের মানুষের কাছে তার আবেদন তারা যেন কুমিরগুলোকে বিরক্ত না করে।