প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে আনন্দ ভ্রমণ করেছেন জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা। এমন অভিযোগ করেছেন প্রাথমিকের কয়েকজন শিক্ষক।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে পটুয়াখালী শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা নিজেদের ফেসবুকে আনন্দ ভ্রমণের ছবি দিয়েছেন। তবে শিক্ষকদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন তারা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, পটুয়াখালী রাঙ্গাবালী উপজেলায় ৭১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশে সমন্বিত বিদ্যালয় পরিদর্শনের কথা রয়েছে শিক্ষা কর্মকর্তাদের। এর অংশ হিসেবে ২৪ ফেব্রুয়ারি রাঙ্গাবালীর চর তুফানিয়া এলাকায় ভ্রমণে যান তারা। ওই দিনই ভ্রমণের কয়েকটি ছবি নিজেদের ফেসবুকে পোস্ট করেন শিক্ষা কর্মকর্তারা।
ওই ছবিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোল্লা বক্তিয়ার রহমান, সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মফিজুল ইসলাম, গলাচিপা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সগির, গলাচিপা উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা কামাল হোসেন, রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দেবাশীষ ঘোষ, রাঙ্গাবালী উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বায়েজিদ ইসলাম ও মো. আল মামুনকে একসঙ্গে দেখা যায়।
উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কর্মকর্তাদের চা-নাশতা ও যাতায়াতের খরচ হিসেবে প্রত্যেক বিদ্যালয় থেকে চার হাজার টাকা চাঁদা নির্ধারণ করে দেন রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। তার নির্দেশে উপজেলার মৌডুবী হাই এ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাইলাবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মৌডুবী মুখরবান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা কর্মকর্তাদের রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে রাত্রিযাপন করে ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে ট্রলারে করে বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে ভ্রমণ করেন কর্মকর্তারা। ওই দিন দুপুরে চর তুফানিয়ায় ভূরিভোজের আয়োজন করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাঙ্গাবালী উপজেলার একটি সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা রাঙ্গাবালীতে ভ্রমণে আসবেন বলে বিষয়টি আমাদের আগেই জানানো হয়েছিল। তাদের নাশতা ও যাতায়াত খরচের জন্য প্রতি বিদ্যালয়ে চার হাজার টাকা করে চাঁদা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমার বিদ্যালয়ের পক্ষে থেকে চার হাজার টাকা দিয়েছি।’
কে এই চাঁদা নির্ধারণ করে দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চাঁদার বিষয়টি সামনে আসলে সব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এক জায়গায় বসে আলোচনা করে প্রত্যেক বিদ্যালয় থেকে চার হাজার টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন। পরে টাকাগুলো তুলে উপজেলা শিক্ষা অফিসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’
উপজেলার আরেক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের কাছে আমরা অসহায়। তারা যেভাবে চান সেভাবেই আমাদের চলতে হয়। বাধ্য হয়ে তাদের চাহিদা অনুযায়ী চার হাজার টাকা দিতে হয়েছে। মূলত শিক্ষকদের কাছ থেকেই টাকা তুলেছি। আমাদের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভ্রমণে গেছেন।’
রাঙ্গাবালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বদরুল মুনির অপু বলেন, ‘শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের চা-নাশতা করিয়েছি। এতে কিছু টাকা খরচ হয়েছে। এটি আমাদের ব্যাপার। তবে চাঁদা নয়।’
এ বিষয়ে রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দেবাশীষ ঘোষ বলেন, ‘জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বিদ্যালয় পরিদর্শনে এসেছেন। কোথাও ঘুরতে যাইনি আমরা। কারও কাছ থেকে টাকাও নিইনি।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পটুয়াখালী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোল্লা বক্তিয়ার রহমান বলেন, ‘আমিসহ কয়েকজন শিক্ষা কর্মকর্তা সমন্বিতভাবে রাঙ্গাবালী পরিদর্শনে গিয়েছিলাম।’
ভ্রমণ ও শিক্ষকদের কাছ থেকে চাঁদা তোলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কোথাও ভ্রমণে যাইনি। কোনও শিক্ষকের কাছ থেকে টাকা-পয়সা নিইনি আমরা। আর কেউ টাকা নিয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন বলেন, ‘চাঁদা নেওয়ার বিষয়ে কোনও শিক্ষক আমাদের কাছে অভিযোগ করেননি। তবু খোঁজখবর নিয়ে সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’