বাস সার্ভিস সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মানববন্ধন ও ছয় দফা দাবির প্রতিবাদে জামালপুরে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল থেকে জামালপুর থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। এতে করে দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা।
জানা যায়, গত রবিবার সকাল ৮ টার দিকে জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জয়রামপুর এলাকায় রাজিব পরিবহনের একটি বাস ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় অটোরিকশার চালকসহ ৪ জন আহত হয়। পরে আহতদের উদ্ধার করে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবুল কাশেম নামে এক ব্যক্তি মারা যান।
আহতদের মধ্যে দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরও একজন।
দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রতিবাদস্বরূপ, দুপুরে ফেরিঘাট এলাকায় বাস শ্রমিকরা এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরদিন সোমবার দুপুরে জামালপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রাজিব পরিবহনের সব বাস সার্ভিস বন্ধের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা। এ সময় তারা ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন।
দাবিগুলো হলো:
(১) সরকারি গেজেট অনুযায়ী দূরপাল্লা বাসভাড়া ২.২০ টাকা (প্রতি কিলোমিটার) বাস্তবায়ন করতে হবে। (২) গেট লক সার্ভিস করতে হবে ও নির্ধারিত স্টপেজ ছাড়া যত্রতত্র যাত্রী উঠা বা নামানো যাবে না। (৩) ফিটনেসবিহীন, ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি বাজেয়াপ্ত ও বেপরোয়া গতিতে যান চলাচল বন্ধ করতে হবে।
(৪) পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের পুনর্গঠন করতে হবে। (৫) জেলার অভ্যন্তীণ সিএনজি রুটগুলোতে ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রী ভোগান্তি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। (৬) প্রতিটি বাসে সিসি ক্যামেরা নিশ্চিত করা যাতে যাত্রী হয়রানি মনিটরিং করা যায় এবং গাড়ির স্টাফদের আইডি কার্ড বাধ্যতামূলক করা।
এমন দাবি উত্থাপনের পরেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা ও বাস শ্রমিকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। এরপর থেকে জামালপুর জেলা থেকে দেশের সব রোডে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন। হুট করেই এমন সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়ে বাসস্ট্যান্ডে আগত যাত্রীদের ওপর।
জেলার মেলান্দহ উপজেলা থেকে দুই শিশুসন্তান ও বৃদ্ধা মা কে নিয়ে আসা শিউলি বেগম জানান, বাস বন্ধ করে দিয়েছে সেটা জানতাম না। ট্রেনের টিকিট না পেয়ে বাসে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তুু বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখি বাস চলছে না। এখন পুনরায় বাড়িতে ফিরে যেতে হচ্ছে।
পলাশ নামে এক যাত্রী জানান, তিনি পাবনা ইপিজেড এ চাকরি করেন। তিনি ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন এবং আজ তার ছুটি শেষ। পাবনা যাওয়ার উদ্দেশ্যে জামালপুর বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখেন পরিবহন ধর্মঘট চলছে।
তিনি বলেন, এখন বেশি টাকা খরচ করে হলেও অন্য কোন উপায়ে তার পাবনা পৌঁছাতে হবে, তা না হলে চাকুরির সমস্যা হবে।
সদর উপজেলার শ্রীপুর থেকে স্ত্রীকে সাথে নিয়ে আসা গার্মেন্টসকর্মী লাভলু হাসান বলেন, গার্মেন্টসে তারা দুজনেই চাকুরী করেন। আগামীকাল সকালে তাদের কাজে জয়েন করতে হবে। রোজা নিয়ে এখন তাদের আবার শেরপুর জেলায় যেতে হবে। পরে সেখান থেকে ঢাকার বাসে উঠবে তারা।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন জামালপুরের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল আবিদ সৌরভ জানান, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে বাস শ্রমিকরা হামলা করে। এরপর থেকে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ৫ আগষ্টের পর সারাদেশে বিভিন্ন সেক্টর সংস্কার হলেও জামালপুরের রাজিব পরিবহনসহ বিভিন্ন বাস সার্ভিস পূর্বের মতোই রয়েছে। এখন সময় এসেছে এসব সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার।
জামালপুর জেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক ও শ্রমিক ইউনিয়নের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আব্দুস সোবহান দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে জানান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে কতিপয় দুষ্কৃতকারী জামালপুর বাসস্ট্যান্ডের সামনে রাস্তা অবরোধ করে এবং যানচলাচলের বিঘ্ন ঘটায়। তাদের সাথে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হলে তারা সে প্রস্তাব প্রত্যাখান করে এবং বাসস্ট্যান্ডের ভিতরে ঢুকে শ্রমিকদের উপর হামলা করে।
এমতাবস্থায় নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে আমরা কর্মবিরতি পালন করছি। তিনি বলেন, সে সব দুষ্কৃতকারীকে অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করা না হলে এই পরিবহন ধর্মঘট চলবে।
জামালপুর জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম জারনিস বলেন, বাস সার্ভিস উন্নতকরণের জন্য যে কেউ দাবি করতে পারে। তবে সেটার জন্য সময় দিতে হবে। একদিনে সবকিছু পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। আমরাও চাই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এই জেলার বাস সার্ভিস উন্নত হোক।
আপনার মতামত লিখুন :