ঢাকা মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ, ২০২৫

সরকারি নির্দেশনায় সচল থাকলেও বাস্তবে অচল কয়েন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৫, ০৮:১০ পিএম
ফাইল ছবি

কয়েন (ধাতব মুদ্রা) অর্থাৎ খুচরা পয়সা নিয়ে নিদারুণ সব যন্ত্রণার সম্মুখীন হতে হচ্ছে ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের মাঝে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা না থাকলেও এক ও দুই টাকার কয়েন অচঁল। নানা অজুহাতে শুধু দোকানদাররাই নন ব্যাংকও নিতে চায় না এ কয়েন। তাই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সরকারের সহায়তা চেয়েছেন স্থানীয়রা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রায় সবগুলো উপজেলা ও সদরের বাজারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়,দুই টাকার কাগজের নোটের লেনদেন স্বাভাবিক। এমনকি পাঁচ টাকার কয়েন নিয়েও কারও আপত্তি নেই। তবে এক ও দুই টাকার কয়েন যেন ‘অচল পয়সা’।এক ও দুই টাকার কয়েন দিয়ে লেন-দেন করতে গেলেই বাধে বিপত্তি এটাকে একটা বড় সমস্যা হিসেবে দেখছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের আনন্দ বাজারের মুদি ব্যবসায়ীরা।স্থানীয় ছোট ছোট চায়ের দোকান টং দোকান গুলোতেও একই অবস্থা। 

জেলা শহরের বিভিন্ন সুনামধন্য ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও বেকারীতে গেলে দেখা যায় কোনো পন্য কিনে ৪৮ টাকা বা ৪৯ টাকা হলে পঞ্চাশ টাকার নোট দিলে ফেরত হিসাবে দুই টাকার কাগজের নোট অথবা থাকলে চকলেট হাতে ধরিয়ে দেয়।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, কারও পণ্যের দাম এল ৬১ টাকা। ১ টাকার কয়েন লেনদেন হয় না বলে নিতে হয় ৬০ টাকা। এভাবে ১ টাকা করে প্রতিদিন ১০০ ক্রেতাকে ছাড় দিলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়। বছরের ৩৬৫ দিন হিসাব করলে ক্ষতি দাঁড়ায় ৩০ হাজার টাকার ওপরে। যে ক্ষতি হয়তো হিসাবেই ধরছেন না কেউ।

কয়েন লেনদেন না হওয়ায় ছোট ব্যবসায়ীরা বেশি বিপাকে পড়েছেন বলে মনে করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পৌর মুক্তমঞ্চের চা বিক্রেতা মুজিব মিয়া। তিনি উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতি কাপ চা পাঁচ টাকা থেকে ছয় টাকায় বিক্রি শুরু করেছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রূপালী বাংলাদেশকে  বলেন, ১ টাকার কয়েন না চলায় প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কাপ চা ১ টাকা কমে ৫ টাকাতেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরে চলছে। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার আউলিয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা খোকন মিয়া। ৩ সাপ্তাহ আগে ঢাকায় গিয়েছিলেন। এই সময়ে লেনদেন করতে গিয়ে তাঁর পকেটে এক ও দুই টাকার কয়েকটি কয়েন প্রায় ১৭ টাকা জমা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফেরার দুই সাপ্তাহ পরও সেগুলো তাঁর পকেটেই রয়ে গেছে। খোকন বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া কোনো দোকানে কয়েন দিতে গেলে মনে হয়, আমি অচল পয়সা দিচ্ছি। কেউই নিতে চান না।’

শহরের কয়েকটি চায়ের দোকান ও মুদি দোকান ঘুরে একাধিক ক্রেতার সাথে কথা বললে তারা জানান,কয়েন অচলে সবচেয়ে বেশি বিপাকে ক্রেতারা। তাঁদের ভাষ্য হচ্ছে, কয়েনের লেনদেন না হওয়ায় বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছেন আসলে ক্রেতারাই। কারণ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁদের ওই এক ও দুই টাকা ছেড়ে যেতে হচ্ছে। আর এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকায় বিষয়টি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে রূপ নিয়েছে। বাজারে এখন এক ও দুই টাকায় যেসব পণ্য পাওয়া যায়, তার মধ্যে বেশি কেনাবেচা হয় চকলেট, শ্যাম্পু ও দেশলাই। কয়েনের বদলে এসব পণ্য দিয়ে কাজ চালানোর প্রবণতা দেখা যায় দোকানগুলোতে। তবে সবার যে এসব পণ্যের চাহিদা থাকে, তা নয়। এ কারণে অনেক ক্রেতা ওই টাকার দাবি ছেড়ে দেন। 

এক ও দুই টাকার কয়েনের লেনদেন না হওয়ার প্রশ্নে ক্রেতা–বিক্রেতারা একে অপরের ওপর দায় চাপাচ্ছেন। অনেকে আবার অভিযোগ করেন, ব্যাংকে গেলেও ধাতব মুদ্রার কয়েনগুলো নেওয়া হয় না। এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের কয়েকটি সরকারি–বেসরকারি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক ও ম্যানেজারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েন লেনদেন বন্ধে ব্যাংকের কোনো হাত নেই। বরং তাঁদের ভল্টগুলো কয়েনে ভর্তি। পাঁচ টাকার কয়েনের চাহিদা থাকলেও কেউ তাঁদের কাছ থেকে এক বা দুই টাকার কয়েন নিতে চান না।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সোনালী ব্যাংক পিএলসি প্রধান করপোরেট ডেপুটি ম্যানেজার আক্তার হোসেন,রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, সব ব্যাংকের ভল্টে একটা নির্দিষ্টসংখ্যক কয়েন জমা রাখার নিয়ম আছে। তাঁরা সেটা পালন করেন। তিনি আরো বলেন, কেবল এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যেই কয়েন লেনদেনে অনীহা দেখা যায়। এটা দূর করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।