জনতা ব্যাংক এমডির শ্যালকের অভিনব প্রতারণা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: মার্চ ৫, ২০২৫, ০১:২৯ এএম

জনতা ব্যাংক এমডির শ্যালকের অভিনব প্রতারণা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

পতিত সরকারের আমলে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বর্তমানে জনতা ব্যাংকের (এমডি) মজিবুর রহমানের নাম ভাঙিয়ে তার আপন শ্যালক মামুনুর রশীদ ফাত্তাহ লোকজনকে বিভিন্ন ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার নাম করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। 

চাকরির নামে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে গা-ঢাকা দিতেন। পরিবর্তন করতেন নিজের মোবাইল নম্বর-বাসস্থান। চাকরিপ্রত্যাশীরা প্রতারক মামুনুর রশীদ ফাত্তাহর বোন জামাইকে দেখে টাকা লেনদেন করতেন। চাকরির জন্য চুক্তিপত্র করার সময় ফাত্তাহ তার বোন জামাই টাকা নিবেন বলে লেনদেন করতেন। 

আবার টাকা নিয়ে অনেক সময় চাকরিপ্রত্যাশীদের চেক দিতেন ফাত্তাহ। চেকের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত প্রতারক মামুনুর রশীদ ফাত্তাহকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার করার পর অনেক ভুক্তভোগী তার এমন অপকর্মের সাক্ষ্য দেন। ভুক্তভোগীদের দাবি, মামুনুর রশিদ ফাত্তাহ এমন প্রতারণা করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

গ্রেপ্তার মামুনুর রশিদ ফাত্তাহ (৪১) ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার মৃত হারুন অর রশিদের ছেলে। তিনি ঢাকার শান্তিবাগ এলাকায় বসবাস করতেন। 

গত সোমবার সকালে ঢাকার শান্তিবাগের বাসা থেকে পলাতক এই প্রতারককে গ্রেপ্তার করে গফরগাঁও থানা পুলিশ। পরে সেই দিন দুপুরে আসামিকে থানায় আনা হয়। 

২০১৯ সালে গফরগাঁও উপজেলার জন্মেজয় গ্রামের বাহার উদ্দিনের ছেলে নাহিদ আলমকে চাকরি দেবে তার কাছে চেকের বিনিময়ে সাড়ে ৪ লাখ টাকা নেন মামুনুর রশিদ ফাত্তাহ। চাকরি দিতে না পেরে গা-ঢাকা দেন। 

পরে ২০১৯ সালে নাহিদ আলম ময়মনসিংহ যুগ্ম দায়রা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে ২০২৩ সালের ২৯ জানুয়ারি আদালত মামুনুর রশিদ ফাত্তাহকে এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন। এর পর থেকে ফাত্তাহ পলাতক ছিল। পরে পুলিশ তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তার সোমবার সকালে গ্রেপ্তার করে।

এ বিষয়ে মামলার বাদী নাহিদ আলম বলেন, আমি আদালতের কাছে ন্যায়বিচার পেয়েছি। পুলিশ প্রতারককে গ্রেপ্তার করলেও ফাত্তাহকে অনৈতিকভাবে সাহায্যকারী বাইরে রয়ে গেছে। এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

অপর ভুক্তভোগী মামুনুর রশীদ ফাত্তাহর আপন চাচাতো ভাই শেখ আলীম রেজা আপেল বলেন, আমার কাছ থেকে ইউসিবি ব্যাংকে চাকরি দেবে বলে তার দুলাভাই (বর্তমান) জনতা ব্যাংকের এমডি মজিবুর রহমানের নাম বলে ৭ লাখ টাকা নেন ফাত্তাহ। ২০১৯ সালে আমাকে ইউসিবি ব্যাংকের এমডি স্বাক্ষরিত একটি নিয়োগপত্র দেন। 

চাকরিতে যোগদান করতে গিয়ে দেখি নিয়োগপত্রটি ভুয়া। এরপর টাকা ফেরত দেওয়ার নামে শুরু হয় নানা নাটকীয়তা। টাকা চাইতে গেলে মিথ্যা মামলা ও হুমকি দিত ফাত্তাহর বড় বোন হ্যাপিসহ পরিবারের লোকজন। 

আমি আইনি প্রক্রিয়ায় এগোতে গেলেও ফাত্তাহ ও তার পরিবার তারা ক্ষমতা খাটিয়ে পুলিশকে প্রভাবিত করেন। আমি তার শাস্তি ও টাকা ফেরত চাই।

গফরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.  শিব্বিরুল ইসলাম বলেন, আসামি অর্থঋণ আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে পলাতক ছিলেন। তাকে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

মামুনুর রশিদ ফাত্তাহর স্ত্রী লাবনী আক্তার রূপালী ব্যাংক রাজারবাগ শাখার রেমিট্যান্স অফিসার। ফাত্তাহর বিষয়ে জানতে লাবনীর নাম্বারে কল দিলে রিসিভ করেন। কিন্তু সংবাদকর্মী পরিচয় দিতেই তিনি লাইন কেটে দেন।

জনতা ব্যাংকের (এমডি) মজিবুর রহমানের নাম্বারে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে এসএমএস করে কল দেওয়ার কারণ জানতে চান। পরে তার নাম ভাঙিয়ে শ্যালকের অপকর্মের বিষয় জানতে চেয়ে এসএমএস করলেও তিনি কোনো রিপ্লাই দেননি।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!