রাজশাহীতে ঈদকে ঘিরে সক্রিয় প্রতারক চক্র

জনাব আলী, রাজশাহী

প্রকাশিত: মার্চ ৫, ২০২৫, ১০:১৫ এএম

রাজশাহীতে ঈদকে ঘিরে সক্রিয় প্রতারক চক্র

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে রাজশাহীতে বৃদ্ধি পেয়েছে প্রতারণা, চুরি ও ছিনতাইয়ের কার্যক্রম। রাস্তাঘাট, বাসা বাড়ি ও ব্যাংক এলাকায় বিভিন্ন প্রতারক চক্রের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত ঘটছে অপরাধ। এসব চক্র পুলিশের নাগালের বাইরে থাকায় নগরীর কুচপাড়া মহল্লার হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজ সংলগ্ন এলাকায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিনবার চুরির ঘটনা ঘটে। ফলে নগরীর মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

কুচপাড়া মহল্লার বাসিন্দা মহ্বত হোসেন জানান, তার নির্মানাধীণ দুইতলা বাড়িতে চারবার বিদ্যুতের তারসহ প্রায় তিন লাখ টাকার মালামাল চুরি করে। একই এলাকার বাসিন্দা মুত্তাকিয়া খাতুন বলেন, গত ৪ ফেব্রুয়ারি কে বা কারা তার বাড়ির পানির ডিপ মোটর মেশিন ৭০ ফিট গভীর থেকে তুলে নিয়ে গেছে।

হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অ্যাসিট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার বলেন, স্কুলের ৮০ হাজার টাকার বিদ্যুতের তার গত ২ মার্চ রাতে চুরি হয়ে গেছে। এ এলাকায় প্রতিনিয়ত চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারছে না। সর্বশেষ গত সোমবার রাজশাহী বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জের সোনালী ব্যাংকে এক গৃহবধূর কাছে থেকে প্রতারণার মাধ্যমে সঞ্চয়ের ৬৮ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়েছে তিন প্রতারক। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত পুলিশ তাদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়নি। টাকা খোয়া গিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন ওই গৃহবধূর পরিবার।

গত সোমবার সকালে উপজেলার চানপাড়া গ্রামের গৃহবধূ খাদিজা বেগম (৪৫) গোডাউন মোড়ে অবস্থিত সোনালী ব্যাংক ভবানীগঞ্জ শাখায় যান। নিজের জমানো টাকা ব্যাংকের ওই শাখা থেকে উত্তোলনের জন্য ৬৮ হাজার টাকার একটি চেক নারী গ্রাহকদের বুথে দেন। এ সময় তার পেছনে তিনজন প্যান্ট, শার্ট পরা তিন ব্যক্তি ছিলেন। তাদের মধ্যে একজন গ্রাহকের কাছাকাছি ছিলেন। ব্যাংক থেকে টাকা ওই নারী গ্রাহককে বুঝে দেওয়ার পর তিনজন ওই তিন ব্যক্তি কাছাকাছি আসেন। তাদের মধ্যে একজন নিজেকে ব্যাংকের লোক পরিচয় দিয়ে ভুলক্রমে তাকে জাল টাকা দেওয়া হয়েছে বলে জানান।

টাকাগুলো পালটে আসল টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তার কাছ থেকে টাকাগুলো নেন। তিনি পাশের কাউন্টারে যাওয়ার কথা বলে সটকে পড়েন। তার সঙ্গে থাকা অন্য দুই ব্যক্তিও সটকে পড়েন কৌশলে। দীর্ঘ সময় পার হলে তারা ফিরে না আসায় সন্দেহ হয়। পরে তিনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও স্বজন জানালে প্রতারিত হওয়ার বিষয় নিশ্চিত হয়। ব্যাংক থেকে সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে তিন প্রতারককে শনাক্ত এব টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হয়। তবে তাদের শনাক্ত করতে না পেরে বিকেলে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

ওই গ্রাহকের ছেলে ডিম ব্যবসায়ী আবু মুসা মিঠু বলেন, তার মা সহজ সরল। সরল বিশ্বাসে ব্যাংকের লোক ভেবে টাকাগুলো দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। প্রতারণার শিকার হওয়া খাদিজা বেগম বলেন, প্রতারক নিজেকে ব্যাংকের লোক পরিচয় দেওয়াতে বিশ্বাস হয়েছে। ব্যাংকের ভেতরে এরকম হবে, তা ভাবতে পারেননি। খোদ ব্যাংকের ভেতরেই এ ঘটনা ঘটেছে। দিনভর তাকে শনাক্ত ও টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চালানোর পর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি।

এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংক ভবানীগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, সিসি ফুটেজে যা দেখলাম তাতে মনে হয়েছে, প্রতারকেরা আগ থেকে ওই নারী গ্রাহককে অনুসরণ করেছে। সুযোগ বুঝে টাকা নিয়ে সটকে পড়েছে। তাদের পরে জানানো হয়েছে। গ্রাহককে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে বাগমারা থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম জানান, অপরাধীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। প্রতারকদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

আরবি/এসআর

Link copied!