ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ, ২০২৫

বাদাম বিক্রির টাকায় চলে নুরুজ্জামানের পরিবার

বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ৫, ২০২৫, ০৩:২৭ পিএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের কাজল গ্রামের ১২ বছর বয়সী নুরুজ্জামান জীবনযুদ্ধে এক অক্লান্ত সৈনিক। জন্মের পর থেকেই দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত এই কিশোরের জীবন অন্যদের চেয়ে ভীষণ আলাদা। তার বাবা শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী, মা মানসিক ভারসাম্যহীনের মতো, সংসারের উপার্জনক্ষম কেউ নেই। ছোট্ট বয়সেই নুরুজ্জামান হয়ে উঠেছে পরিবারের একমাত্র ভরসা।

প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে সে কাঁধে তুলে নেয় বাদামের ঝুড়ি। স্থানীয় বাজার থেকে ৩০০ টাকায় আড়াই কেজি বাদাম কিনে আনেন, যা তার দাদি ভেজে দেন। এরপর নুরুজ্জামান বেরিয়ে পড়ে বীরগঞ্জ পৌর শহরের অলিগলিতে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে বাদাম বিক্রি করাই তার জীবনযাত্রার অবলম্বন। কোনো দিন ৪৫০, কোনো দিন ৫০০ টাকার বাদাম বিক্রি হয়। খরচ বাদে ১৫০-২০০ টাকা লাভ হয়, দাদি ভিক্ষা করেন, আর আমার বাদাম বিক্রির টাকায় আমাদের সংসার চলে ।

নুরুজ্জামান বলেন, বাবা-মা অসুস্থ, দাদি রান্না করে দেন। আমাদের থাকার জায়গা দুই শতক জমি ব্যতীত আর কিছু নেই। বাদাম বিক্রি না করলে কেউ খেতে পারবে না। ছোট বোন মাদ্রাসায় পড়ে, তার খরচও আমাকে চালাতে হয়।

তার দাদি কেঁদে বলেন, এই বয়সে ছেলেটার স্কুলে থাকার কথা ছিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, সংসারের ভার এখন তার ছোট্ট কাঁধে। এটা ভেবে খুব কষ্ট লাগে। প্রতিবেশী সাদেকুল ইসলাম বলেন, ছেলেটা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করে। আমরা চেষ্টা করি সাহায্য করতে, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। যদি সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসতেন, তাহলে হয়তো তার জীবনটা এমন হত না।

স্থানীয় মসজিদের ইমাম মো. মিজানুর রহমান বলেন, নুরুজ্জামান আমার প্রতিবেশী। আমিও যথাসাধ্য সাহায্য করি। কিন্তু এই বয়সী ছেলেদের স্কুলে থাকার কথা, খেলার মাঠে সময় কাটানোর কথা। দারিদ্র্য আর পারিবারিক সংকট তাদের শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করছে। যদি সমাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এগিয়ে আসতেন, তাহলে হয়তো সে আবার পড়ালেখায় ফিরতে পারত।
 

পাল্টাপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো. রুস্তম আলী বলেন, এই পরিবারটি অত্যন্ত অসহায়। আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী সাহায্য করি এবং সরকারি কোনো অনুদান এলে তাদের দেওয়ার চেষ্টা করি।

বীরগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, নুরুজ্জামানের বাবা আব্দুস সালাম প্রতিবন্ধী ভাতা পান। তবে এই পরিবারের আরও সহায়তা প্রয়োজন । আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তাদের সহযোগিতার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব।

নুরুজ্জামানের জীবন আমাদের চোখের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক নির্মম বাস্তবতা। যে বয়সে তার স্বপ্ন দেখার কথা, সে বয়সেই স্বপ্নগুলো হারিয়ে গেছে পরিবারের দায়িত্বের ভারে। আমাদের
মানবতা কি জাগবে? নাকি সমাজের নীরবতা অসহায় শিশুদের শৈশব গ্রাস করবে? এখনই সময় নুরুজ্জামানের পাশে দাঁড়ানোর!