অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, হুমকিতে এলাকাবাসী

সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: মার্চ ৫, ২০২৫, ০৩:৪৬ পিএম

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, হুমকিতে এলাকাবাসী

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বগুড়া সারিয়াকান্দির যমুনা ও বাঙালি নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের চলছে বালু দস্যুদের রাজত্ব। কাজলার জামথল ঘাটসংলগ্ন এলাকায় ৫টি স্কেবেটর বসিয়ে অনুমোদনবিহীন শতাধিক ড্রাম-ট্রাক ও মাহিদ্রা ট্রাক্টর দিয়ে চরের মাটিকাটা হচ্ছে। এমনকি বোরিং করেও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। 

অভিযোগ পাওয়া গেছে, কামালপুর ইউনিয়নের রৌহাদহ পয়েন্টের ৫০ লাখ সিএফটি বালু বিক্রির পর সেখানে আবারও বাল্কহেড দিয়ে চর কেটে বালু উত্তোলন চলছে।

একই দৃশ্য হাটশেরপুর ইউনিয়নের নিজবলাইল বাজারের সামনে যমুনা নদীতেও। সবগুলো পয়েন্টে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের নেতৃত্বে রয়েছেন স্থানীয় বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতরা। এমনকি তাদের ছত্রছায়ায় যোগ দিয়েছেন কিছু আওয়ামী লীগ নেতারাও।

এসব বিষয়ে প্রশাসন বলছে- দ্রুতই অভিযান পরিচালনা করা হবে।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের এ মহোৎসবে ৫০ মিটার এলাকার মধ্যে ৫৭৮ কোটি টাকা ব্যায়ে নদী সংরক্ষণের কাজ চলমান রয়েছে বলে জানা যায়। এরপরও গত কয়েকমাস ধরে এসব এলাকায়  বালু উত্তোলন রোধ করা যাচ্ছে না।  চলছে ৬টি স্কেবটর বসিয়ে চর কাটার উৎসব। ফলে এ চরে নতুন করে বড়-বড় ক্যানেল সৃষ্টি হয়েছে।

এসব বালু শতাধিক অনুমোদনহীন ড্রাম-ট্রাকে বহন করে জামালপুরসহ দেশর বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এর ফলে এ উপজেলার  মাদারগঞ্জ নৌ-ঘাট থেকে মাদারগঞ্জ শহরগামী সড়কটি যানবাহন বা পথচারীদের চলাচলের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ সড়কে ছোট গাড়ি মোটরসাইকেল বা ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চলাচলেই হচ্ছে ভোগান্তি পোহাতে।

এ বিষয়ে চালকরা জানিয়েছে, সড়কের বেহাল দশার কারণে তাদের যানবাহন প্রতিদিনই নষ্ট হচ্ছে। চরের ২ ফসলি জমি থেকে জোরপূর্বক বালু উত্তোলনের ফলে জমির মালিকেরা ফসলের অভাবে তাদের পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। এখানে বেশ কয়েকটি বোরিং মেশিন বসিয়েও মাটির গভীর থেকেও উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। এসব বালু উত্তোলনের নেতৃত্বে রয়েছেন উপজেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি রাশেদ মিয়া, কাজলা ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বেলাল এবং মাদারগঞ্জ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান সাকু ও বেশকিছু অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি সবাই অস্বীকার করেছেন। হাফিজুর রহমান সাকু বলেন, আমার বাড়ী তো জামালপুর, আমি কিভাবে সারিয়াকান্দি গিয়ে বালু তুলব? ওখানে ওখানকার স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত।

জানা যায়, এখানে গত কয়েকমাস আগে একই পদ্ধতিতে ৪০ লাখ সিএফটি বালু উত্তোলন করা হয়েছিল। যেখানে গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে যৌথবাহিনীর অভিযানে ১০ জন বালুদস্যুকে আটক করা হয়। পরের দিন ২৪ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে প্রত্যেকের নামে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করে তাদের ছেড়ে দেন। এছাড়াও  উত্তোলিত বালু গুলো মৌখিকভাবে জব্দ করেন। কিন্তু এর কয়েকদিন পরেই আবারও অবৈধভাবে উত্তোলিত ও বালুগুলো বিক্রি করেন স্থানীয় বিএনপির কতিপয় অসাধু নেতারা।

 

অন্যদিকে উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের নিজ বলাইল বাজারের পূর্ব পাশে যমুনা নদী থেকেও ১০ থেকে ১২ টি মাহিন্দ্রা ট্রাক্টর দিয়ে রাত থেকে করে সকাল ৮টা পর্যন্ত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেই চলেছে। এসব স্থানে স্থানীয় বিএনপির বেশকিছু নেতারা যুক্ত হলেও মূল দাযিত্বে এখনো আওয়ামী লীগ নেতারা।
এলাকার রেজা, সাত্তার, ভিক্ষু জানান, ‘আমাদের প্রায় ২৫ বিঘা জমির মাটি স্কেবেটর বসিয়ে জোরপূর্বক কেটে নিয়ে গেছে প্রভাবশালী নেতারা। জমিতে এখন ১৫ ফিট ক্যানেলের সৃষ্টি হয়েছে। জমিগুলোতে বছরে ২টি করে ফসল পাওয়া যেতো। এখন আমরা কি খেয়ে বাঁচব। তাছাড়া বালু পরিবহনের ফলে জামথল গ্রামের রাস্তা দিয়ে চলাচল একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পরেছে। এছাড়া এভাবে বালু তোলায় আমাদের গ্রামকে রক্ষার জন্য নদী সংরক্ষণ কাজটিও হুমকির সন্মুখীন হচ্ছে। গত সরকারের সময় এরকমের কোনো পরিবেশ কখনো সৃষ্টি হয়নি।’

চন্দনবাইশা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি চাঁন মিয়া বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরেই রৌহাদহ পয়েন্টে চন্দনবাইশা মৌজা থেকে বালু কেটে স্তুপ করা হচ্ছে। আমি অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার রহমান বলেন, ‘অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। অভিযান পরিচালনা করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আরবি/জেডি

Link copied!