সিলেটে ভোটেই হবে ছাত্রদলের কমিটি

সিলেট ব্যুরো

প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০২৫, ০১:২৪ এএম

সিলেটে ভোটেই হবে  ছাত্রদলের কমিটি

সিলেটে প্রাণ ফিরেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে সরব হয়ে উঠেছে তারা। গতি পেয়েছে কার্যক্রমেও। ক্যাম্পাসে পেয়েছে হারানো জৌলুস। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আগে অনেক ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের কমিটি থাকলেও ছাত্রলীগের কারণে কার্যক্রম করা ছিল কঠিন। 

প্রকাশ্যে কোনো ক্যাম্পাসেই তাদের দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি। ৫ আগস্টের পর বদলে গেছে দৃশ্যপট। গেল দুই সপ্তাহে সিলেটের বিভিন্ন কলেজ-মাদ্রাসায় ছাত্রদলের ৬০টি কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ছিল জেলা ছাত্রদলের অধীনে ৪৩টি আর মহানগর শাখার অধীনে ১৭টি কমিটি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আরও ২৯টি কমিটির চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, পট পরিবর্তনের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ছাত্রদলকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখেন। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতাদের দিয়ে টিম গঠন করে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠান। সাম্য এবং মানবিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাঠানো হয় ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে। বাদ যায়নি সিলেটও। 

সিলেট জেলা, মহানগর ও সুনামগঞ্জের দায়িত্ব দেওয়া হয় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম কারদি ও মওদুদ আহমদকে। সাম্য এবং মানবিক বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের প্রশিক্ষিত টিম।

এ আহ্বান শেষ হতে না হতেই শুরু হয় ছাত্রদলের সদস্য সংগ্রহ অভিযান। ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে সিলেটে পুনরায় আসে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ওই তিন সদস্যের সাংগঠনিক টিম। সিলেট ও সুনামগঞ্জের প্রতিটি ক্যাম্পাসে শুরু হয় সদস্য সংগ্রহ অভিযান। এ কার্যক্রম সফল করতে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের নেতাদের দিয়ে করা হয় ১৩টি সাংগঠনিক টিম। 

সদস্য ফরম বিতরণ ও পূরণ কার্যক্রম শেষে যাচাই-বাছাই করে শুরু হয় ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের কাউন্সিল। এর আগে ২০২০ সালে ছাত্রদলের সদস্য সংগ্রহ অভিযান করা হয়েছিল সিলেটে।  গেল ২৫ ফেব্রুয়ারি সিলেটের জকিগঞ্জ সরকারি কলেজ, ইছামতি ডিগ্রি কলেজ ও দক্ষিণ সুরমা কলেজ থেকে শুরু হয় ছাত্রদলের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল কার্যক্রম। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে কর্মীরা নেতৃত্ব বাছাই করার সুযোগ পান। 

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম জানান, দলে আগেও ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন  হয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ক্যাম্পাসগুলোতে কাউন্সিল করা সম্ভব হয়নি। কারণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ ছিল না দেশে। একটি অগণতান্ত্রিক সরকার ছিল। গণঅভ্যুত্থানের পর আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল হয়েছে এবং ভোটের মাধ্যমে কর্মীরা তাদের নেতা নির্বাচন করছে। 

 ছাত্রদল সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলার অধীনে এখন পর্যন্ত ৪৩টি কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে কয়েকটি সাংগঠনিক ইউনিট এবং কয়েকটি কলেজ-মাদ্রাসা রয়েছে। তবে শুধু সাংগঠনিক ইউনিটে কাউন্সিল হচ্ছে। বাকিগুলোতে যাচাই-বাছাই করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

জেলার অধীনে আরও ২২টি কমিটি করার প্রস্তুতি হাতে নিয়েছে জেলা ছাত্রদল। জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দিলওয়ার হোসেন দিনার জানান, ৮টি সাংগঠনিক ইউনিটে (কলেজ) দ্রুত কাউন্সিল করা হবে। বাকিগুলোতে দ্রুত কমিটি দেওয়ার লক্ষ্যে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। 

এদিকে মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ফজলে আহসান রাব্বী জানন, সিলেট মহানগরের অধীনে ইতিমধ্যে ১৭টি কমিটি অনুমোদন করা হয়েছে। এরমধ্যে কাউন্সিল হয়েছে দক্ষিণ সুরমা কলেজে। কমিটি গঠন ও কাউন্সিলের প্রস্তুতি রয়েছে আরও ৭টির। এরমধ্যে এমসি কলেজ, সিলেট সরকারি কলেজ, সরকারি মদন মোহন কলেজ, সিলেট ‘ল’ কলেজসহ ৭টি ইউনিটের কমিটি বাকি রয়েছে। 

ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম কারদি জানান, ইতিমধ্যে সুনামগঞ্জে শুরু হয়েছে দলের এ কার্যক্রম। ইতিমধ্যে সুনামগঞ্জে ছাত্রদলের দুটি কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে কেবল ছাত্রদের দিয়েই কমিটি দেওয়ার কারণে উপজেলা ও পৌরসভার নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের মাঝে প্রশ্ন উঠেছে কাদের দিয়ে উপজেলা ও পৌর ছাত্রদলের কমিটি করা হবে। 

এ প্রশ্নের উত্তর জানতে একাধিক কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতাদের সঙ্গে আলাপ হয় এ প্রতিবেদকের। তারা জানান, এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে সবেমাত্র যাদের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে তাদের কমিটিতে স্থান পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!