পটুয়াখালীর বাউফলে পুকুরের মাছ শিকারকে কেন্দ্র করে আপন ভাই ও বোনের পরিবারের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে তাদের মা বিবিজানসহ অন্তত দশজন আহত হয়েছেন ৷ বুধবার (৫ মার্চ) রাত ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত তিন দফায় মদনপুরা ইউনিয়নের চন্দ্রপাড়া গ্রামে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে এই সংঘর্ষ হয়।
এতে আহত হয়েছেন চন্দ্রপাড়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম গাজী, তার মা বিবিজান, স্ত্রী তাসলিমা বেগম, ছেলে সুমন গাজী, বোন ফাতেমা বেগম, বোনের জামাই সালাম মীর, ভাগ্নে নাঈম মীর, স্ত্রীর বোন কহিনুর, স্থানীয় অটোরিকশা চালক জসিম ও ভাগ্নে-ভাগ্নীসহ অন্তত ১৫ জন।
স্থানীয়রা জানায়, পৈতৃক জমিসংক্রান্ত বিষয়ে চন্দ্রপাড়া গ্রামের শহিদুল গাজীর সাথে তার বোন ফাতেমার বিরোধ চলছিল। বাড়ির সামনে রাস্তার পাশে ঘর নির্মাণ করে বাবা-মা`সহ স্বামী-সন্তান নিয়ে থাকেন ফাতেমা। তাদের বাবা মায়েরও অভিযোগ ছেলে শহিদুল ও পুত্রবধূ তাসলিমার বিরুদ্ধে। আর স্ত্রী সন্তান নিয়ে বাড়িতে থাকতেন শহিদুল। ওয়ারিসদের কাউকে না জানিয়ে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর কাছে একটি পুকুরের মাছ বিক্রি করেন শহিদুল।
গতকাল পুকুরের পানি সেচ করে মাছ শিকার করে ওই ব্যবসায়ী। এ নিয়ে বোনের ছেলে নাঈম ক্ষুদ্ধ হয়। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে মামা শহিদুলকে মারধর করার হুমকি দেয়। ঘটনা শুনে শহিদুলকে নিয়ে স্ত্রী তাসলিমা ও তার বোন কালাইয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা কোহিনুর, কোহিনুরের দুই ছেলেসহ প্রায় ১০জন ব্যক্তি ফাতেমার বাড়িতে যায়। তখন বোন ফাতেমা ও তার বাবা-মায়ের সাথে শহিদুল গংয়ের বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তারা সবাই সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। এ সময় আহত হয় অন্তত ৭ জন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উভয় পক্ষ চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে আসলে, তাদের মধ্যে দুই দফা সংঘর্ষ হয়। এ সময় একজন নারী (তাসলিমা) ইট দিয়ে সালাম মীরের (ননদের জামাই) মাথায় আঘাত করে। এতে গুরুতর জখম হয়েছেন তিনি। এ ছাড়াও কয়েকজনকে আঘাতপ্রাপ্ত হতে দেখা যায়। `আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ছয়জনকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত ডা. তাসনিম তাসলিমা ইসলাম।`
ফাতেমা বেগমের অভিযোগ, তাদের না জানিয়ে মাছ শিকারের কথা জানতে চাইলে ক্ষিপ্ত হয় তার ভাই শহিদুল। পরে কালাইয়া ইউনিয়ন থেকে আসা বহিরাগতদের নিয়ে তার বাড়িতে হামলা করে শহিদুল এবং তাসলিমা। পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করা হয় তাকেসহ তার মা, ছেলে ও বউকে। হাসপাতালে দেখতে গেলে, তখন হামলা হয় তার স্বামী সালামের ওপর। ইটের আঘাতে মাথা ফেটে যায় সালামের। তাদের বহনকারী গাড়ির চালক জসিমকে রক্তাক্ত করার অভিযোগ ভাই শহিদুলের আত্মীয়দের বিরুদ্ধে।
শহিদুলের স্ত্রী তাসলিমার অভিযোগ, তাদের ভাগের পুকুরের মাছ তারা ধরেছে। অসুস্থ স্বামী শহিদুলকে দেখতে আসেন তার বোন কোহিনুর ও ছেলেরা। হুমকি দেয়ার কথা শোনেন তারা। শহিদুলকে মারধর না করার জন্য অনুরোধ করতে ফাতেমাদের বাড়িতে গেলে ডাকাত বলে চিৎকার দিয়ে তাদের ওপর হামলা করে ফাতেমাসহ তার পরিবারের সদস্যরা।
এ বিষয়ে বাউফল থানার ইন্সপেক্টর (পুলিশ পরিদর্শক, তদন্ত) আতিকুল ইসলাম জানান, ঘটনা জানার পরে চন্দ্রপাড়া গ্রামে ও হাসপাতাল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। জমিসংক্রান্ত বিরোধ ও পারিবারিক দ্বন্দ্ব`র কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দাখিল হয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :