পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরে রূপান্তরিত হচ্ছে সিলেটের বিয়ানীবাজারের শেওলা স্থলবন্দর। অল্প দিনের মধ্যেই সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে তার পূর্ণাঙ্গতা লাভ করতে যাচ্ছে। সে লক্ষ্যে সরকারের তরফ থেকে কাজও এগিয়ে চলছে। এ স্থলবন্দরটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে স্থাপনা গড়ে ওঠার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে হাজার হাজার মানুষের। সড়কপথে বাংলাদেশের সাথে ভারতের পণ্য আমদানি-রপ্তানির বাণিজ্যদ্বার হিসেবে পরিচিত বিয়ানীবাজারের শেওলা স্থলবন্দর।
তবে দুঃখের বিষয়, শেওলা স্থলবন্দরটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হওয়ার আগেই একটি চক্র সরকারের অধিগ্রহণকৃত এবং সরকারি বিপুল পরিমাণ জমি দখলে নিয়ে নিয়েছে। দখল প্রক্রিয়া এখনো চলমান। স্থানীয় প্রশাসন ও সর্বসাধারণের নাকের ডগায় কাজটি করছে প্রভাবশালীরা। তারা কৌশলে সেখানে অবৈধভাবে গড়ে তুলছে স্থাপনা।
বন্দরের প্রবেশগেটের সামনেও অস্থায়ী দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছে। বিস্তৃত বন্দর এলাকার আশপাশে অবৈধভাবে বাণিজ্যিক মার্কেট স্থাপন করা হয়েছে। দৈনিক ভিত্তিতে এসব দোকান থেকে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। কেউ আবার বন্দরের খালি জায়গা দখল করে তা কয়লা-পাথর ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দিচ্ছেন। এসব সরকারি জমির ভাড়া বাবদ অগ্রিম পুরো মৌসুমের টাকা আদায় করে নিচ্ছেন। স¤প্রতি সরেজমিনে এসব দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়।
শেওলা স্থলবন্দর, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত। এটি বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নের কোনাগ্রাম সীমান্তে অবস্থিত। এর অপর পাশে ভারতের আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ জেলার সুতারকান্দি আইসিপি। ২০১৫ সালের ৩০ জুন শেওলা শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দর ঘোষণা করা হয়।
২০২৩ সালের ৭ জুন বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করে কর্তৃপক্ষ। শেওলা স্থলবন্দর কাস্টম্স স্টেশনে কুশিয়ারা নদীপথের মাধ্যমে ১৯৪৮ সাল থেকে আমদানি-রপ্তানি শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে ওই শেওলা স্থল কাস্টম্স সুতারকান্দিতে (বড়গ্রাম) স্থানান্তরিত করা হয়।
প্রতিবেশী দেশের সাথে আমদানি-রপ্তানির কাজ ত্বরান্বিত করতে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণসহ সরকার শেওলা শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দরে রূপান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করে। এই স্থলবন্দর দিয়ে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার চালু রয়েছে। ১২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২২ দশমিক ১০ একর ভূমিতে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। তবে বন্দরের প্রায় ২ একর জমি এরই মধ্যে অবৈধ দখরদাররা নিজেদের করায়ত্বে নিয়ে গেছে।
বন্দরে কর্মরত শ্রমিক শাহীন জানান, রাতে ঘুমানোর সময় যে জায়গা খালি দেখা যায়, সকালে ওঠার পর সেখানে স্থাপনা তৈরি হয়ে যায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে বন্দরের জন্য প্রয়োজনীয় জমিও আর অবশিষ্ট থাকবে না।
অপর শ্রমিক রমিজ বলেন, প্রথমে বাঁশ-টিন দিয়ে চালা ও বেড়া দেন দখলদাররা। পরে আস্তে আস্তে তা স্থায়ী রূপ পায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্দরে কর্মরত দায়িত্বশীলরা জমি দখল ঠেকাতে আগ্রহী নয়। তারা এসব বিষয় নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কিছুই অবগত করেন না। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শেওলা স্থলবন্দরের সহকারী কাস্টমস রাজস্ব কর্মকর্তা কাজী মো. মোস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, আমরা অবহেলা করছি বিষয়টি ঠিক নয়। ইতোমধ্যে কয়েকটি জায়গা দেয়াল ও কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সংরক্ষণ করেছি। সব জায়গা তো একেবারে সংরক্ষণ করা যায় না। তবে প্রভাবশালী কারা এই দখল করছে, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।