ঢাকা শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫

শেষ বয়সে একটু সুখ-শান্তি চাই, কে দেবে?

মনিরুজ্জামান শেখ জুয়েল, গোপালগঞ্জ
প্রকাশিত: মার্চ ৭, ২০২৫, ০২:৫৪ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

এক অসহায় বৃদ্ধা নারীর নাম সোনাবান। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী বয়স ৫৭ বছর হলেও প্রকৃত পক্ষে বয়স প্রায় ৮০ বছর। মা, বাবা, স্বামী, সন্তান, ভাই, বোন কেহ নাই। জরাজীর্ণ একটি টিনের ঘরে খেয়ে না খেয়ে বছরের পর বছর কাটছে তার জীবন।

জানা যায়, গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত আদিল উদ্দিন তালুকদালের মেয়ে সোনাবান। পুতুল খেলার বয়সে চাচা লাল মিয়া তালুকদার সোনাবানকে তার ছেলে আলকাচ তালুকদারের সাথে বিয়ে দেন। ওই সময়ে শিশু বয়সে স্বামী-সংসার বুঝতেন না সোনাবান। স্বামী আলকাচ সিলেটে থাকতেন। ওখানে ২য় বিয়ে করে সংসার পাতেন। বাড়ি আসা বন্ধ করে দেন আলকাচ। সোনাবান শ্বশুর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি চলে আসেন। 

কয়েক বছর পর উপজেলার লাখিরপাড় গ্রামের ইনতাজ উদ্দিন মুন্সীর ছেলে নুর মোহাম্মাদ মুন্সীর সাথে সোনাবানের ২য় বিয়ে হয়। দিনমজুর স্বামীকে নিয়ে সুখের সংসার সোনাবানের। কোল জুড়ে আসে এক ছেলে। হঠাৎ করে এক অসুখে মারা যায় ছেলে। এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় স্বামী নুর মোহাম্মাদ মুন্সী।

অভাবের তাড়নায় ছাড়তে হয় ২য় স্বামীর বাড়ী। ততোদিনে মা-বাবাও মারা যায় সোনাবানের।স্বামীর বাড়ি ছেড়ে গোপালগঞ্জ শহরে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে চলতে থাকে তার কষ্টের জীবন।

১২ বছর আগে উপজেলার সিতাইকুন্ড গ্রামের মেহের কাজীর ছেলে আব্দুল কাজীর সাথে সোনাবানের ৩য় বিয়ে হয়। ২ মেয়ে ও ১ ছেলেকে রেখে আব্দুল কাজীর ১ম স্ত্রী মারা যায়। ছেলে মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেলে একাকি হয়ে পড়েন তিনি। এ সময় আত্মীয়-স্বজন আব্দুল কাজীর সাথে সোনাবানের বিয়ে দেয়। দিনমজুর স্বামী আব্দুল কাজীকে নিয়ে ভালোই চলছিল সোনাবানের সংসার। এ সুখও সইলো না সোনাবানের কপালে। বিয়ের দুই বছরের মাথায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় সোনাবানের ৩য় স্বামী আব্দুল কাজী। এর কিছুদিন পর আব্দুল কাজীর ছেলেও মারা যায়। তখন থেকেই সম্পূর্ণ একাকী হয়ে পড়েন সোনাবান। 

বয়সের ভারে এখন ক্লান্ত তিনি। কিছুদিন আগে পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে পড়েন। পাড়া প্রতিবেশিদের কাছ থেকে দু’মুঠো চাল-ডাল চেয়ে নিয়ে কোনমতে চলছেন সোনাবান।

আজ শুক্রবার (৭ মার্চ) সকালে সরেজমিনে সিতাইকুন্ড গ্রামে সোনাবানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সোনাবানের ঘরটির অবস্থা খুবই নাজুক। ঘরের টিনগুলো জং ধরে বড়বড় ফুটো হয়ে গেছে। কাঠগুলো ঘুনে ধরে ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই ভিজে একাকার হতে হয়।

সোনাবানের প্রতিবেশী কাজী ইউনুচ জানান, অনেক দুঃখে কষ্টে তার জীবন কাটে। সরকারি কোন সহায়তা তিনি পান না। ভাঙ্গা ঘরে প্রায়ই না খেয়ে থাকতে হয়। প্রতিবেশীরা একটু সাহায্য করলে তার পেটে ভাত জুটে। অন্যথায় অনাহারে থাকতে হয়।

ইউপি সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম তুহিন জানান, সোনাবান গোপালগঞ্জে থাকা অবস্থায় ভোটার হয়েছেন। ভোটার স্থানান্তর করেননি। যে কারনে তাকে সরকারি কোন সহায়তা দেওয়া সম্ভব হয় নাই। এখানকার ভোটার হলে তাকে সরকারি সহযোগিতা দেওয়া হবে। অসহায় সোনাবান জানান, অনেককে বলেছি আমার ভোটার আইডি কার্ডটি পরিবর্তন করার জন্য। কেউ আগায় আসে নাই। ভাঙ্গা ঘরে ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে খেয়ে না খেয়ে জীবন চলে। শেষ বয়সে একটু সুখ-শান্তি চাই। কে দেবে? আল্লাহ ছাড়া যে আমার আর কেউডি নাই।