ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০২৫

ধনবাড়ীতে সূর্যমুখীর বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

ধনবাড়ী (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ৭, ২০২৫, ০৫:২৫ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে সূর্যমুখী ফুল চাষে লাভের নতুন আশা দেখছেন কৃষকরা। স্বল্প খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ বেড়েছে উপজেলায়। ধনবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে সরেজমিন ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে, যেখানে কৃষকরা এই ফুল চাষ করে ভালো ফলন পাচ্ছেন।

উপজেলার কিছু গ্রামে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সুর্যমুখী চাষ করা খেতে এখন ফুলের সমারোহ। সহস্রাধিক সূর্যমুখী ফুল পূর্ণতা নিয়ে বাতাসে দোলা খাচ্ছে। সবুজ পাতার আড়ালে মুখ উচুঁ করে আছে সূর্যমুখী। সূর্যমুখীর হাঁসিতে হাসছে মাঠ। চারিদিকে সবুজের মাঝে হলুদের সমারোহ।

আর এই হলুদ প্রকৃতিকে করেছে আরোও লাবন্যময়। সূর্য যেদিকে ফুলের মুখও সেদিকে। তাই এটাকে সূর্যমুখী বলে। নয়নজুড়ানো এ দৃশ্য মোহিত করছে সবাইকে। প্রতিদিন আশপাশ এলাকা থেকে সৌন্দর্য পিয়াসুরা দল বেঁধে আসেন সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে।

যদুনাথ পুর ইউনিয়নের নল্ল্যা এলাকার খলিল মিয়া গত বছর কিছুটা ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও এবার ৭ শতক জমিতে সূর্যমুখী ফুল চাষ করেছেন। তিনি জানান, কৃষি অফিসের সহায়তায় তিনি বীজ ও সার পেয়েছেন এবং বর্তমানে ক্ষেতে প্রায় আড়াই হাজার টাকা খরচ করেছেন।

খলিল মিয়া আশা করছেন, ভাল ফলন পাওয়ার পর তিনি এই ক্ষেত থেকে ২-৩ মন বীজ সংগ্রহ করতে পারবেন।

এছাড়া, মুশুদ্দি  ইউনিয়নের মুশুদ্দি  গ্রামের জালাল আহমেদও ২০ শতক জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। তিনি বলেন, বীজ সংগ্রহের সময় এসেছে এবং গরু-ছাগল কিছুটা ক্ষতি করেছে, তবে আশা করছেন ভাল ফলন হবে। তিনি জানান, মাত্র ১৫০০-২০০০ টাকা খরচ হয়েছে এরপরও ১০-১২ মন বীজ সংগ্রহ করতে পারবেন।

সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে তেল ও খৈল তৈরি হয়, যা বিভিন্ন বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা যায়। ফুলের গাছ শুকিয়ে গেলে তা জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। ধনবাড়ীতে সূর্যমুখী ফুল চাষে কম খরচে অধিক লাভ পাওয়া যাচ্ছে, ফলে কৃষকরা এই চাষে আরও আগ্রহী হচ্ছেন।

সূর্যমুখী  চাষিরা জানান, সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে তেল ও খৈল হয়। ফুলের ক্ষেতে মৌচাক বসিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মধুও সংগ্রহ করা যায়। এছাড়া শুকিয়ে যাওয়া গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। সূর্যমুখী বীজ বপনের ৯০ থেকে ১০৫ দিনের মধ্যেই ফুল থেকে বীজ ঘরে তুলতে পারেন।

চাষিদের মতে কম খরচে ও অতি অল্প সময়ে সুর্যমুখী ফুল চাষ করে অধিক লাভবান হওয়া যায়। এ ফসল চাষে কম খরচে বেশি লাভবান হওয়ায় অন্যান্য চাষিরাও সুর্যমুখী চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আগামীতে ধনবাড়ী  উপজেলায় সুর্যমুখী চাষ আরও বাড়বে বলে চাষিরা বলছেন।

ধনবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, অল্প সময়ে কম পরিশ্রমে ফসল উৎপাদন ও ভালো দাম পাওয়া যায় বলে কৃষকরা এখন সূর্যমুখী চাষ করছেন। প্রতি বিঘা জমিতে ১ কেজি বীজ দিতে হয়। দেড় ফুট অন্তরর অন্তর একটি করে বীজ বপন করতে হয়। একটি সারি থেকে আরেকটি সারির দূরত্ব রাখতে হয় দেড় ফুট।

মাত্র ৮৫  দিয়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ হয়। যা অন্য কোনো ফসলের চেয়ে কম পরিশ্রমে ভালো আয়। এছাড়া সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে উৎপাদিত তেল কোলেস্টেরল মুক্ত ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় বাজারে এ তেলের চাহিদাও  বেশি।

ধনবাড়ী উপজেলার  কৃষি কর্মকর্তা  মো. মাসুদুর রহমান জানান, সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে তেল কোলেস্টেরল মুক্ত এবং পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ, যার কারণে বাজারে তেলের চাহিদা বাড়ছে। কৃষি অফিস তাদের কৃষকদের আরও উদ্বুদ্ধ করতে বিনামূল্যে বীজ ও সার দিচ্ছে। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন এবং ভবিষ্যতে ধনবাড়ীতে সূর্যমুখী চাষের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।