ঢাকা সোমবার, ২৪ মার্চ, ২০২৫

দুই মাস মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা: কর্মহীন ২৫ হাজার জেলে

লালমোহন (ভোলা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ৭, ২০২৫, ০৮:৫৪ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ভোলার লালমোহন উপজেলার মেঘনা এবং তেঁতুলিয়া নদীতে চলছে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা। জাটকা ইলিশ সংরক্ষণ ও ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে অভয়াশ্রমগুলোতে গত পহেলা মার্চ মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া এ নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ৩০ শে এপ্রিল পর্যন্ত। চলমান এই নিষেধাজ্ঞায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন উপজেলার ২৪ হাজার ৮০৬ জন নিবন্ধিত জেলেসহ আরো কয়েক হাজার জেলে।

লালমোহন উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, উপজেলার অন্তত ২৭টি ঘাট দিয়ে জেলেরা মেঘনা এবং তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ শিকারে নামতেন। এরমধ্যে ধলীগৌরনগর এবং লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নে জেলের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

নিষেধাজ্ঞার এই সময়ের ক্ষতি পুষিয়ে ওঠতে জেলেদের জন্য সরকারিভাবে ৪০ কেজি করে চার মাস চাল বরাদ্দ রয়েছে।

উপজেলার বিভিন্ন মৎস্যঘাট ঘুরে দেখা গেছে, যেখানে কয়েকদিন আগেও ব্যাপক হাঁক-ডাক ছিল, সেখানে এখন কেবলই নীরবতা। বর্তমানে তারা মাছ ধরার ট্রলার ঘাটে ভিড়িয়ে মেরামত এবং জাল বুনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। মাছ শিকারের ওপর পুরোপুরিভাবে এসব জেলেরা নির্ভরশীল হওয়ায় তারা এখন অলস সময় পার করছেন। বেকার হয়ে পড়েছেন জেলেরা।

লালমোহন উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের বাতিরখাল মৎস্যঘাটের জেলে মো. মনজু বলেন, সংসারে স্ত্রীসহ দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে রয়েছে। ছেলেরাও আমার
সঙ্গেই নদীতে মাছ শিকার করে। আমাদের যা আয় হয় তা দিয়েই চলে সংসার। তবে গত কয়েকদিন আগে নদীতে সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। যার ফলে আমরা কর্মহীন হয়ে পড়েছি। এতে করে বর্তমানে সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়েছে। তাই নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে সরকারিভাবে আমাদের জন্য যে চাল বরাদ্দ রয়েছে তা দ্রুত সময়ের মধ্যে বিতরণের দাবি জানাচ্ছি।

একই মৎস্যঘাটের জয়নাল উদ্দিন মাঝি নামে আরেক জেলে জানান, নিজেদের প্রয়োজনে কয়েকটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছি। তবে নিষেধাজ্ঞায় আমরা পুরোপুরি কর্মহীন, কোনো আয় নেই। তবুও এনজিওর লোকজন কিস্তির জন্য চাপ দিচ্ছেন। বর্তমানে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোনো রকমে তিনবেলা খাওয়াই দায় হয়ে পড়েছে, সেখানে এনজিওগুলোর ঋণের কিস্তি দেবো কিভাবে? তাই প্রশাসনের কাছে দাবি করছি, নিষেধাজ্ঞার এই সময়টাতে এনজিওগুলোর কিস্তি আদায় বন্ধ রাখতে তারা যেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আলী আহমেদ আখন্দ বলেন, নিষেধাজ্ঞা কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য এরইমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন মৎস্যঘাটে
সচেতনতামূলক সভা এবং নদী পাড়ে মাইকিং করেও জেলেদের সচেতন করা হয়েছে। জেলেরা আমাদের সেসব কর্মকাণ্ডে ভালোই সাড়া দিয়েছেন। চলমান এই
নিষেধাজ্ঞায় জেলেরা সত্যিই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। যার জন্য তাদের সরকারিভাবে ৪০ কেজি করে চার মাস চাল দেওয়া হয়। সে সব জেলেরা শিগগিরই পাবেন।
এছাড়া নিষেধাজ্ঞার এই দুই মাসে এনজিওগুলো যেন তাদের কিস্তি আদায় বন্ধ রাখেন সে জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবো।