হোসনা আক্তার জন্মগতভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী, যার উচ্চতা মাত্র ৩৯ ইঞ্চি। চলাফেরা করতে তার কষ্ট হয়, অন্যের সহায়তা ছাড়া চেয়ারে বসা বা যানবাহনে ওঠাও সম্ভব নয়। তবে নিজের এই সীমাবদ্ধতা উপেক্ষা করে তিনি অন্যান্য শারীরিক প্রতিবন্ধী নারী ও পুরুষদের স্বাবলম্বী করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের চর কালিবাড়ি এলাকার বাসিন্দা হোসনা, কুদরত আলী ও আলেয়া বেগম দম্পতির মেয়ে। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাকে থামিয়ে রাখতে পারেনি; বরং তিনি এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ঘুরে প্রতিবন্ধীদের খুঁজে বের করেন এবং তাদের একত্র করে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘অগ্রণী প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থা’। এই সংগঠনের সভাপতি হিসেবে তাকে নির্বাচিত করেছে প্রতিবন্ধী সম্প্রদায়ের মানুষরাই।
তার কাজ এখানেই শেষ নয়। তিনি এলাকায় বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন এবং সমাজ উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০২৪ সালে বিভাগীয় পর্যায়ে ‘অদম্য নারী সম্মাননা’ এবং ময়মনসিংহ সদর উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ‘শ্রেষ্ঠ জয়িতা’ পুরস্কার লাভ করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, নিজের প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও হোসনা অন্য প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়িয়ে সমাজে সুপরিচিত হয়েছেন। তিনি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিবন্ধী মানুষের বাড়িতে গিয়ে তাদের খোঁজখবর নেন, স্বাবলম্বী হওয়ার উপায় শেখান এবং সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পৌঁছে দেন। তার সহায়তায় অনেক নারী সেলাই মেশিনের মাধ্যমে আয় করে নিজেদের সংসার চালাতে পারছেন।
শারীরিক প্রতিবন্ধী মালেকা খাতুন বলেন, একসময় নিজেকে পরিবারের বোঝা মনে করতেন, কিন্তু হোসনার উৎসাহে কাজ শিখে তিনি এখন স্বাবলম্বী।
হোসনা আক্তার জানান, পিসিসি মহিলা ক্লাব থেকে সেলাই ও কুটির শিল্পে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর তিনি এখন অন্যান্য প্রতিবন্ধী নারীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত ১৬০ জনের বেশি প্রতিবন্ধী নারীকে তিনি দক্ষ করে তুলেছেন। তিনি Handicap International-এর ‘উইস টু অ্যাকশন’ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৯-২১ সাল পর্যন্ত নারীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি Access Bangladesh Foundation-এর সঙ্গে ১৮-৩৫ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী নারী-পুরুষদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি প্রকল্প পরিচালনা করছেন এবং ৮৩৪ জন প্রতিবন্ধীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন।
তার মতে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা অবহেলার শিকার হলেও তারা সমাজের জন্য সম্পদ। যদি সমাজ তাদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নেয়, তাহলে তাদের অবস্থান বদলানো সম্ভব।
হোসনার বাবা কুদরত আলী বলেন, একসময় তার মেয়ে ঘর থেকে বের হতে চাইতেন না, লজ্জা পেতেন। কিন্তু এখন তিনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে কাজ করছেন, যা তাকে গর্বিত করে।
তার মা আলেয়া বেগম বলেন, হোসনা কখনোই আলাদা ছিল না। তিনি অন্যদের জন্য কাজ করছেন, যা দেখে আনন্দ লাগে।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার মধ্যে ৩৯ জন নারীর মধ্য থেকে শ্রেষ্ঠ পাঁচজন ‘অদম্য নারী’ সংবর্ধনা পেয়েছেন, যার মধ্যে হোসনা আক্তারও একজন।
আপনার মতামত লিখুন :