ঢাকা সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫

গ্রামে বেড়ে উঠা মেয়েটিই আজ সহকারী জজ

সাইদুল ইসলাম, কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশিত: মার্চ ৮, ২০২৫, ১০:৩১ এএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার লাল মাটির গোপীনাথপুর গ্রামের মেয়ে আঞ্জুমান আরা স্বর্ণালীর সফলতার গল্প শোনাব আজ। এমনিতেই বাংলাদেশে নারীদের উচ্চশিক্ষা নিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতা, এরপরে যদি হয় গ্রামের মেয়ে তাহলে তো কথায় নেই। তবুও সব বাঁধা পেরিয়ে স্বপ্নের জুডিশিয়ারির লক্ষ্যে পৌঁছেছেন স্বর্ণালী।

তিনি সম্প্রতি প্রকাশিত ১৭শ বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষায় ৫৫তম মেধাক্রমে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। স্বর্ণালীর বাবা মৃত রুহুল আমিন ও মা রুমানা ইয়াছমিন। তার শিক্ষাজীবনের শুরুটা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এরপর গ্রামের শহীদ বাবুল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালে মাধ্যমিক ও পরবর্তীতে নিজ গ্রামের গোপীনাথপুর আলহাজ শাহ আলম কলেজ থেকে ২০১৭ তে উচ্চ মাধ্যমিক দিয়ে সুযোগ হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পড়াশোনার। সেই থেকেই ডানা মেলতে থাকে বিচারক হওয়ার স্বপ্নটার।

তবে ক্লাস নাইন থেকেই তার প্রবল ইচ্ছে ছিল আইন নিয়ে পড়াশোনার। উচ্চ মাধ্যমিকের পর প্রথমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতত্ব বিভাগে ভর্তি হয়েও আইন নিয়ে পড়ার জন্য সেই ভর্তি বাতিল করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পড়াশোনা করতে হয়েছে তাকে। কারণ ছিল মেয়ে হওয়াতে ভয়ে এতদূর পড়তে দিবে না বাবা-মা। আর এতেই স্বপ্ন ছুঁয়েছে সে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে থাকা অবস্থায় বিয়ে হয় তার।

তবুও স্বামীর সাপোর্ট ও বাবা-মায়ের দোয়ায় জুডিশিয়ারিতে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে সে। তবে প্রথমবারে নয় দ্বিতীয়বারে সফলতার মুখ দেখেছে সে। কেননা ১৬শ বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। কিন্তু ভাগ্য তার সহায় হয়নি সেবার। ভাইভা দিয়েও সুপারিশ প্রাপ্ত হয়নি।

তবে সে হাল ছেড়ে দেয়নি। স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখার তীব্র ইচ্ছাশক্তি নিয়ে আবারও প্রস্তুতি শুরু করে স্বর্ণালী। ফলে ১৭শ বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষায় সুপারিশপ্রাপ্ত হয় সে। জুডিশিয়ারির লিখিত পরীক্ষার সময় হাসপাতালের আইসিইউতে ছিলেন তার বাবা। তবুও দৃঢ় মনোবল ও প্রবল ইচ্ছাশক্তির কারণে সফল হয় সে।

সফলতার কারণ জানতে চাইলে আঞ্জুমান আরা স্বর্ণালী বলেন, আমার সফলতার পেছনে বাবা-মা, স্বামীসহ পরিবারের প্রত্যেকের অবদান আছে। বিশেষ করে আমার কঠিন অধ্যবসায় আমাকে পৌঁছে দিয়েছে আমার স্বপ্নের জুডিশিয়ারিতে। আমার স্বপ্নের ডানা ছিল আমার বাবা-মা।

নারীদের আমি এটাই বলব, আপনার চেষ্টা ও কঠিন অধ্যবসায় থাকলে গ্রাম কিংবা শহর বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে থেকেও পৌঁছে যেতে পারবেন সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়ায়।