সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের নলতা আহছানিয়া মিশনে দেশের বৃহত্তম ও বিশ্বেও দ্বিতীয় বৃহত্তম ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রমজানের এক মাসে এখানে প্রায় এক লাখ ষাট হাজার লোক ইফতার করবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও রমজানের প্রথম দিন থেকে বৃহত্তম এই ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম রোজা থেকে এখানে এখনো পর্যন্ত প্রত্যেক দিন সাড়ে পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার চারশত রোজাদার একত্রে বসে ইফতার করছে জানিয়েছে কতৃপক্ষ। সওয়াব হাসিলের জন্য বড় এ ইফতার মাহফিলে শরিক হতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ইফতারের উদ্দেশ্যে নলতায় ছুটে আসেন রোজাদাররা। ধনী, গরিব সকল মানুষ ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে বসে ইফতার করেন।
মিশন কর্তৃপক্ষ জানায়, আহ্ছানউল্লা (র.) ১৯৩৫ সালে নিজে নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। মিশন প্রতিষ্ঠা করার পর তিনি নিজেই প্রতি বছর রমজান মাসব্যাপী এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করতেন। পরবর্তী সময়ে এই ইফতার মাহফিলের পরিধি বেড়ে যায়। ১৯৫০ সাল থেকে শুরু করে প্রতিবছর রমজান মাসে ইফতারের আয়োজন করে আসছে নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশন। ইফতার মাহফিলে সকলে একত্রে বসার জন্য আহছানউল্লা (রহ.) এর মাজার প্রাঙ্গনে বিশাল টিনের ছাউনি নির্মাণ করা হয়।
জানা গেছে, এখানে ইফতার সামগ্রী বিতরণের জন্য রয়েছে দুইশ থেকে আড়াইশ স্বেচ্ছাসেবক। সবাই এসেছেন নিজ উদ্যোগে। আর ৩০ জন রয়েছেন দৈনিক বেতনভুক্ত। সকাল ১০টা থেকে রান্নার কাজ শুরু হয়। সাড়ে ৩টার পর থেকে কাজ বণ্টন শুরু করা হয়। আছরের নামাজের পর থেকে ইফতার সাজানোর কাজ শুরু করেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, তারা চেষ্টা করেন, যাতে ইফতার করতে আসা রোজাদারদের কোনো অসুবিধা না হয়। প্রথমে ছাউনির নিচে মাদুর বিছানো হয়। তারপর সারি সারি লাইন করে পানির বোতল দেওয়া হয়। তারপর গ্লাস-প্লেট। সাড়ে পাঁচটার দিকে ইফতার মাহফিল তৈরি হয় জনসমুদ্রে।
নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশনের যুগ্ম-সম্পাদক আমজাদ চৌধুরী জানান, ইফতারের তালিকায় আছে ফিরনি, ডিম, ছোলা ভুনা, খেজুর, সিঙাড়া ও কলা। প্রতিদিন ১৫ মণ দুধের ফিরনি তৈরি করা হয় এখানে। নলতা শরীফের আশপাশের এলাকার মসজিদ ও বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয় এক থেকে দেড় হাজার রোজাদারের ইফতার। রয়েছে সুপেয় পানির বিশেষ ব্যবস্থা। তবে শেষ দশ রমজানে আরও বেশি লোক সমাগম হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, দেশ-বিদেশের ভক্তরা যৌথভাবে এই ইফতারের অর্থ যোগান দিয়ে থাকেন। ইফতারের পূর্বে প্রতিদিন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা দেশ ও জাতির কল্যাণে বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন। এ আয়োজন সফল করার জন্য প্রতিবছর রোজার ৫০ দিন আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশনে ইফতার করতে আসা সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান রুপালী বাংলাদেশকে বলেন, ইফতার মাহফিলের এমন আয়োজন আমার কাছে অসাধারণ মনে হয়েছে। হাজার হাজার মানুষের ইফতার মাহফিল সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য এবং ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলে ইফতারে অংশগ্রহণ করার জন্য এটা অনুসরণীয় মনে হয়েছে।
সাতক্ষীরার তলা থেকে আসা প্রভাষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এতদিন নলতা কেন্দ্রীয় আহছান মিশনে লোকমুখে হাজার হাজার লোকের ইফতারের কথা শুনেছি। আজ নিজে আসতে পেরে এত লোকের সঙ্গে ইফতার করতে পেয়ে ধন্য মনে করছি।