ঢাকা সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫

পানি উঠছে না টিউবওয়েলে, বিপর্যস্ত জনজীবন

ফজলুল করিম, ফটিকছড়ি
প্রকাশিত: মার্চ ৮, ২০২৫, ০২:০৬ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার প্রায় ১৫ ইউনিয়নে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে প্রায় ৬০ হাজার টিউবওয়েল অকেজো হয়ে পড়েছে। এর ফলে এসব এলাকায় সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বাধ্য হয়ে পুকুর, খাল, ডোবা ও কৃষি কাজে ব্যবহৃত ডিপ টিউবওয়েল (গভীর নলকূপ) ও জল মোটরগুলো (সাবমার্সিবল পাম্প) থেকে পানি সংগ্রহ করছেন বাসিন্দারা। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা।

এদিকে এ অবস্থার মধ্যেও সরকারিভাবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রতি বছর হাজার হাজার জল মোটরগুলো (সাবমার্সিবল পাম্প) বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, নারায়ণহাট, দাঁতমারা,বাগানবাজার, ভূজপুর ও হারুয়ালছড়ি,সুন্দরপুর,পাইন্দং ও কাঞ্চননগরসহ ১৫টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকায় এ সংকট বিরাজমান। আমন ধান বোনা এবং রোপা হয় ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারিতে। এপ্রিলের দিকে ধান কেটে ঘরে তুলেন কৃষকরা। মূলত এই সময় বৃষ্টিপাত কম হয়। রোপণের সময় খাল,পুকুর ও ডোবার পানি পাওয়া গেলেও মাঝামাঝি সময়ে এসব জলাশয় শুকিয়ে যায়।

তাই ধান কাঁটার আগপর্যন্ত জমিতে পানির জোগান দিতে কৃষকদের ডিপ টিউবওয়েল (গভীর নলকূপ) ও জল মোটরগুলোর (সাবমার্সিবল পাম্প) ওপরই নির্ভরশীল হতে হয়। এসব গভীর নলকূপ ও সাবমার্সিবল পাম্প দ্বারা অতিমাত্রায় পানি উত্তোলনের ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে অকেজো হয়ে পড়েছে আশপাশের টিউবওয়েলগুলো। খাওয়া ও অন্য কাজে ব্যবহারের পানির জন্য দূর-দূরান্ত গিয়ে জমির গভীর নলকূপ ও সাবমার্সিবল পাম্পই তাদের একমাত্র ভরসা।

স্থায়ী বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরও শুষ্ক মৌসুমে উপজেলায় পানি সংকট দেখা দিয়েছিল। চলতি বছর এ সংকট আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে। ৯৬ থেকে ৯৮ শতাংশ সাধারণ টিউবওয়েল ও শ্যালো মেশিনে পানি উঠছে না।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এসব গভীর নলকূপ ও সাবমার্সিবল পাম্পের সঠিক সংখ্যা তাদের জানা নেই। তাদের বরাদ্দ নলকূপের সংখ্যা দুই হাজার তিন শত চল্লিশটি। প্রস্তাবিত আছে আরো দুইশত ষোলটি। এ ছাড়া পুরো উপজেলায় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায় এ পর্যন্ত স্থাপিত হয়েছে প্রায় দশ হাজার গভীর নলকূপ।

নারায়নহাট ইউনিয়নের চান্দপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. বোরহান বলেন,আমাদের গ্রামে ধান চাষ করার জন্য দুইটি সাবমার্সিবল পাম্প আছে। এসবের কারণে এ গ্রামের সব টিউবওয়েল সব বন্ধ হয়ে গেছে। মহিলারা অনেক দূরে গিয়ে জমির পাম্প থেকে পানি আনতে হয়। খাওয়া ও ব্যবহার পানি নিয়ে অনেক কষ্টে আছি।

একই এলাকার কৃষক মো. সুমন জানান, এ বছর তিনি চার বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। সাবমার্সিবল পাম্পের মাধ্যমে জমির সাথে পানি পেয়ে থাকেন।

জানতে চাইলে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রায় ৫০ ফুটের বেশি নিচে নেমে যায়। এই কারণে টিউবওয়েল বা অগভীর নলকূপগুলো পানি পায় না। নলকূপ বসানোর ক্ষেত্রে ৬০-৮০ ফুট পর্যন্ত গভীরতা নিশ্চিত করে বসালে শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর কিছুটা নিচে নামলেও পানি পাওয়া যাবে। এই সমস্যা সমাধানে গভীর নলকূপের বিকল্প নাই।’

ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘অভিযোগের প্রেক্ষিতে কৃষক এবং বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা করে কৃষকদের বলে দিয়েছি গভীর নলকূপের পানি রাতে নির্দিষ্ট সময়ে তুলতে। দিনের বেলায় বাসিন্দারা যাতে পানি পান।’