বরগুনার পাথরঘাটায় চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানীর অভিযোগ উঠছে জনৈক এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে শিক্ষার্থী মা জেলা কর্মকর্তা বরাবর ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালে, পরে ওই শিক্ষককে শাস্তিস্বরূপ বদলি করে অন্য বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়।
ভুক্তভোগী ছাত্রী প্রবাসী মো. মাসুম বিল্লাহ ও মাতা আরজু বেগমের মেয়ে। সে উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের ছোনবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রী।
শিক্ষার্থীর মা বলেন, সে অত্যন্ত খারাপ, লম্পট প্রকৃতির লোক এর আগেও এই শিক্ষক বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের প্রায় সময়ই শ্লীলতাহানি করার চেষ্টা করে। গত ৮ ডিসেম্বর আমার মেয়েকে ৩য় শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় অফিস কক্ষে ডেকে নেয়। আমার মেয়ে ওই শিক্ষকের কথায় সরল বিশ্বাসে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে যায় এবং আমার মেয়েকে বিভিন্নভাবে ফুসলিয়ে স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করে। আমার মেয়ে বাধা দিতে গেলে তাকে নানা ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি-ধমকি দেয়। পরবর্তীতে আমার মেয়ে বাড়িতে এসে তার চাচির কাছে কান্নাকাটি করে ওই ঘটনা জানায়। পরে আমি ঘটনাটি জানতে পেরে প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষককে অবহিত করি । তারা আমাকে ওই ঘটনার ন্যায়বিচার করে দিবে বলে আশ্বাস দেয়।
শিক্ষার্থীর মা আরজু বেগম বলেন, আমি এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর পোস্ট অফিসের মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করি। আমার মেয়ে ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। বিবাদী একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।
এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগটি করা হয়েছে সেটি আরও দুই মাস আগে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে মীমাংসা করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। যাতে করে আমি সুষ্ঠুভাবে শিক্ষকতা না করতে পারি।
এ বিষয়ে ছোনবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রিনা রানী বলেন, এ রকম একটি অভিযোগ আমার কাছে এসেছে, আমি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছি, বিষয়টি যে দ্বিতীয়বার আবার গড়াবে তা আমি বুঝতে পারিনি। তাহলে বিচারটি আরও কঠোরভাবে করতাম।
পাথরঘাটা শিক্ষা অফিসার দীপক কুমার বিশ্বাস বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান খান বলেন, প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর জন্য বিদ্যালয় একটি নিরাপদ স্থান। সেখানে যদি এমন ধরনের গর্হিত কাজ হয়ে থাকে তাহলে নিশ্চয়ই ওই শিক্ষককে শাস্তির আওতায় আনতে হবে, এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অভিযোগ দায়ের বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু জাফর মো. সালেহ জানান, আমার কাছে একটি অভিযোগপত্র পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের ছোনবুনিয়া এলাকা থেকে আরজু বেগম নামে এক ছাত্রীর অভিভাবক অভিযোগ দায়ের করেছে। অভিযোগটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্তের মাধ্যমে বের করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, ঘটনার গুঞ্জনের পরপরই ওই শিক্ষককে ইতোমধ্যে অনত্র বদলি করে দায়সারা কাজ করেছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আগেই তার বদলি হয়েছিল; তবে সেখানে তাকে না দেয়া গেলেও এ ঘটনার পর তাকে অন্য একটি বিদ্যালয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।