হাওরের মাছ লুট করতে আসা লোকজনের সঙ্গে এলাকাবাসী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে অন্তত অর্ধশতাধিত লোকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ সময় শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ঘটনাস্থল থেকে ৪০-৫০ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
শনিবার (৮ মার্চ) সকালে নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার রসূলপুর গ্রামের পাশে ধনু নদীর ফেরিঘাটে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে খালিয়াজুরী উপজেলার ইজারাকৃত কাঠালজান ও মরাগাঙ্গের মাছ লুট করার জন্য ধনু নদীর পাড়ে জমায়েত হয় বিভিন্ন জেলা উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ। এ সময় মাছ শিকারিরা রসূলপুর ফেরিঘাটের পাশে তাদের পরিবহনের শতাধিক পিকাপ ভ্যান, অটোরিকশা, সিএনজি, হেনট্রলি, মোটরসাইকেল রেখে ধনু নদী পাড় হওয়ার চেষ্টা করে।
এ সময় ফেরিঘাটের লোকজনের সঙ্গে মাছ শিকারিদের তর্কবির্তকের এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে স্থানীয় লোকজন অংশ নিলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এসময় উভয় পক্ষের প্রায় অর্ধশত লোকজন আহত হয়। পরে বিক্ষুব্ধ স্থানীয় লোকজন মাছ শিকারিদের পরিবহনের শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী,পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট গাড়িতে দেওয়ার আগুন নিয়ন্ত্রণ করে।
স্থানীয় লোকজনদের অভিযোগ, মাছ শিকারিরা ফেরি দিয়ে ধনু নদী পাড় হওয়ার সময় তাদের গালমন্দ করে। এ সময় তারা প্রতিবাদ করায় মারধর করতে থাকে। এ সময় সংঘর্ষ বাধলে হাজারও লোকজন রসূলপুর ফেরিঘাটের দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাট করে। পরে রসূলপুর গ্রামে লোকজনের বসত বাড়িতে হামলা করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যায়। পরে বিক্ষুব্ধ স্থানীয়রা মাছ শিকারিদের পরিবহনের শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আহত একাধিক মাছ শিকারি জানান, আমরা খবর পেয়ে মাছ ধরার জন্য ধনু নদীর পাড়ে যাই। সেখানে হাজার হাজার লোকজন ছিল। হঠাৎ সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে স্থানীয় লোকজন একত্রিত হয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সবাইকে মারধর শুরু করে। তারা আমাদের গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়।
মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার নয়ন ঘোষ জানান, এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ১৫/২০ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তারা মাছ শিকার করতে গিয়ে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন। সব রোগী এক সঙ্গে আসায় নাম পরিচয় এখনও সঠিকভাবে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অনেক রোগী আবার প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল থেকে নিয়ে চলে যাচ্ছে।
খালিয়াজুরীর স্থানীয় সংবাদকর্মী মৃণাল কান্তি দেব পুলিশের বরাত দিয়ে জানান, খালিয়াজুরী হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ১৫/২০ জনের মতো চিকিৎসা নিয়েছে। থানায় ৫০ জন আটক রয়েছেন।
খালিয়াজুরী থানার ওসি মো. মকবুল হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আমি ঘটনাস্থলে আছি। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। গাড়ি ভাঙচুর ও আহত সর্ম্পকে বিস্তারিত জানতে পুলিশ কাজ করছে। ঘটনাস্থল থেকে লোকজন আটক করে থানা নেওয়া হচ্ছে। পুরো তথ্য দিতে সময় লাগবে।
জানা গেছে, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে নেত্রকোনার খালিয়াজুরী ও মদন উপজেলার বিভিন্ন ইাজারাকৃত জলমহালের মাছ লুটপাট করার মহাৎসব চালিয়েছে এক শ্রেণির লোকজন।
মাছ শিকারিরা ঘোষণা দিয়ে প্রায় প্রতিদিনিই ময়মনসিংহের নান্দাইন, গৌরিপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের তাড়াইল, নেত্রকোনা সদর, আটপাড়া, কেন্দুয়া, মদন ও খালিয়াজুরী উপজেলার হাজার হাজার লোকজন সমবেত হয়ে পলো ও নানা ধরনের জাল হাওরের ইজারাকৃত বিলের মাছ লুট করছে। গত এক সপ্তাহে মদন উপজেলার নূরেশ্বর বিল, খালিয়াজুরী উপজেলার কির্তনকলা বিল, কারি বিল, উচাবাইদা বিল, হাইলা বিলসহ বেশ কয়েকটি ইজারাকৃত বিলের মাছ লুট করেছে মাছ শিকারিরা। প্রশাসনের বাধা উপেক্ষা করেই প্রতিদিন এমন ঘটনা ঘটছে। যেসব বিলের মাছ লুট হয়েছে এগুলোর ইজারামূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা।
আপনার মতামত লিখুন :