ঢাকা সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫

শিশু ধর্ষণের মূল্য দেড় লাখ টাকা; মাতব্বররা নেন ৫৮ হাজার!

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ৯, ২০২৫, ০৫:৪৭ পিএম
মির্জাপুর থানা

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে নানির বাড়ি বেড়াতে গিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী (১০) ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে উপজেলার আজগানা ইউনিয়নের। ভুক্তভোগী ওই শিশুর পরিবার ভয়ে মুখ না খুললেও সম্প্রতি ঘটনাটি জানাজানি হয়। পরে ধামাচাপা দিতে গ্রাম্যসালিশের আয়োজন করে প্রভাবশালীরা।

সেখানে অভিযুক্ত ধর্ষককে জরিমানা করা হয় দেড় লাখ টাকা। এর মধ্যে ৯২ হাজার টাকা দিলেও জরিমানার বাকি রয়ে গেছে ৫৮ হাজার টাকা। বাকি ৫২ হাজার টাকা মাতাব্বররা ঘুষ নেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। 

এসব ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে খবর পেয়ে শনিবার (৮ মার্চ) দুপুরে থানা পুলিশ ভুক্তভোগী শিশু ও তার মাকে থানায় নিয়ে এসে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এদিন রাতে মামলা হয়েছে।

অভিযুক্তের নাম ফিরোজ (৪৫)। তিনি উপজেলার আজগানা ইউনিয়নের কুড়িপাড়া গ্রামের রিয়াজ উদ্দিন ওরফে নওশের আলীর ছেলে। তিনি পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক।

ঘটনা জানাজানি হলে ১০ জনকে আসামি করে মামলা হলেও কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে স্থানীয় শিক্ষার্থীরা। তবে পুলিশ দাবি করছে, ঘটনা জানা মাত্র মামলাসহ আসামি ধরতে তৎপর হয়েছেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সিএনজি চালক ফিরোজ শিশুটির নানির বাড়ির পাশের জমিতে সার দিচ্ছিল। এ সময় ওই জমির সঙ্গেই শিশুটি বরই গাছ থেকে বরই কুড়াচ্ছিল। তখন ফিরোজ শিশুটিকে কৌশলে ডেকে নিয়ে একটি টয়লেটের ভেতর নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষণের কথা কাউকে বললে মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়াসহ প্রাণে মেরে ফেলার ভয়ভীতি দেখানো হয় শিশুটিকে।

ঘটনার পর বাড়িতে গিয়ে শিশুটি চুপচাপ থাকায় সন্দেহ হয় পরিবারের। পরে বারবার জিজ্ঞেস করায় একপর্যায়ে কান্না করে পুরো ঘটনা মাকে খুলে বলে ওই শিশু। ধীরে ধীরে এ ঘটনা এলাকায়  ছড়িয়ে পড়ে। পরে ধর্ষণের ঘটনার ধামাচাপা দিতে স্থানীয় আব্দুল মালেক, ইউনূস, বাবলু, নূরুল ইসলামসহ কয়েকজন মাতব্বর ঘটনার সপ্তাহখানেক পর গ্রাম্যসালিশের আয়োজন করে। 

সালিশে অভিযুক্ত ধর্ষক ফিরোজকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। গ্রাম্য মাতাব্বরদের চাপের মুখে সালিশটি মেনে নেয় অসহায় পরিবারটি। তবে জরিমানার টাকাগুলো এখনও ভুক্তভোগী পরিবারকে দেওয়া হয়নি। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত ফিরোজ আত্মগোপনে রয়েছে।

শিশুটির মা বলেন, ‘আমার স্বামী সৌদিপ্রবাসী। আমি নিজেও একটি গার্মেন্টেসে চাকরি করি। এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে বাড়িতে বসবাস করছি। ঘটনার কথা কাউকে ভয়ে প্রকাশ করতে পারিনি। আমাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কোনও অভিভাবক নেই। গ্রামের মাতব্বরদের কারণে সালিশ মেনে নিয়েছি। মেয়ের বাবাও ঘটনা শুনেছেন। আমরা অপরাধীদের বিচার দাবি করছি।’

মির্জাপুর থানার ওসি মোশারফ হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনায় অভিযুক্ত ফিরোজকে প্রধান করে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে।’

টাঙ্গাইলের সহকারী পুলিশ সুপার এইচ.এম. মাহবুব রেজওয়ান সিদ্দিকী বলেন, ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করেছে। তবে কয়েকজন কিছুদিন আগেই এলাকা ছাড়ায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে যারা সালিস আয়োজন করেছিল, তাদেরও মামলার আসামি করা হয়েছে।