লিচুর গ্রামে ফলন বিপর্যয়, হতাশ চাষিরা

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০২৫, ১০:২১ এএম

লিচুর গ্রামে ফলন বিপর্যয়, হতাশ চাষিরা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

লিচুর জন্য প্রসিদ্ধ পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা। ফাল্গুন মাস আসলেই লিচুর মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে ভরপুর থাকে গ্রামগুলো। হলুদ রঙের মুকুলে ভরে থাকত শত শত লিচুর বাগানগুলো। কিন্তু এবার সেই মুকুলের মৌ মৌ গন্ধ নেই, মুকুলের পরিবর্তে গজিয়েছে কচিপাতা। মুকুল কম আসায় ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কায় বাগান মালিক, চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

তাদের ধারণা, লিচুর মুকুল না আসা, এমন করুণ দশা গত কয়েক দশকে দেখা যায়নি। মুকুল কম আসার জন্য আবহাওয়াকে দায়ী করছেন কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকরা। প্রতি বছর ৫০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকার লিচু উৎপাদন হয় এই এলাকায়। লিচু চাষের ওপর নির্ভর করে এ অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষের জীবন-জীবিকা চলে।

ঈশ্বরদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ঈশ্বরদী উপজেলায় তিন হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়। চলতি বছর তিন হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ লাখ টন। কিন্তু এ বছর উৎপাদন অনেক কম হবে বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ। আবহাওয়াজনিত কারণে এমনটা হবে বলে মনে করছেন তারা।

সরেজমিনে উপজেলার জয়নগর, মানিকনগর, সাহাপুর, মিরকামারী, আওতাপাড়া, বড়ইচারা, চরমিরকামারি ঘুরে এসে একই চিত্র চোখে পড়ল। গ্রামগুলোতে দেখা যায়, শত শত লিচু বাগানে মুকুলের পরিবর্তে গজিয়েছে নতুন কচিপাতা। নতুন পাতা গজালে মুকুল আসে না। বিগত বছরগুলোতে এ সময় বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করেন চাষিরা। এবারে বাগানগুলোতে সুনসান নীরবতা। যে কারণে লিচুর উৎপাদন নিয়ে চাষিদের সংশয়। ফাল্গুন মাসের শেষ সময়ে চাষিরা বাগান পরিচর্যা করছেন না। ব্যবহার হচ্ছে না সার, কীটনাশক ও মুকলের জন্য ব্যবহৃত ওষুধ।

লিচু চাষিরা জানান, বাগানে ১০০ লিচু গাছ থাকলেও মাত্র ১০-২০টি গাছে মুকুল এসেছে। মুকুলের পরিমাণও অনেক কম। অতীতে এত কম মুকুল দেখা যায়নি। এ বছর কেন এমন হলো তারা বুঝতে পারছেন না। আবহাওয়ার কারণে এ বছর মুকুলের বিপর্যয় হতে পারে বলে তাদের ধারণা।

মানিকনগরের বিশিষ্ট লিচু চাষি ও সার, বীজ কীটনাশক বিক্রেতা জামান ট্রেডার্স এর স্বত্বাধিকারী মোস্তফা জামান (নয়ন) বলেন, তার প্রায় ১৫০টি ছোট-বড় লিচু গাছ থাকলেও লিচুর মুকুল এসেছে মাত্র ১০টি গাছে এবং পরিমাণে খুবই কম। গত বছর তিনি এই বাগানে নয় লাখ টাকার উপরে লিচু বিক্রি করেছিলেন।

বিশিষ্ট লিচু চাষি নায়েব আলী মুন্সি (৭০) জানান, তার এত বছর বয়সে তিনি এ ধরনের ফল বিপর্যয় দেখেননি এমনকি পূর্বপুরুষের কাছ থেকেও শোনেননি, তার প্রায় শতাধিক লিচু গাছ থাকলেও লিচুর আশানুরূপ মুকুল আসেনি।

তিনি আরও জানান, একজন কৃষক হিসেবে সারা বছরে সংসার খরচ ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া খরচসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ এই লিচু চাষের ওপর নির্ভর করে থাকি। বছরের বাকি দিনগুলো তিনি কীভাবে সংসার চালাবেন এ নিয়েই চিন্তিত আছেন। কি কারণে লিচুর মুকুলের এমন বিপর্যয় হলো এর কোনো উত্তর দিতে পারেননি অনেকেই।

বিশিষ্ট লিচু চাষিও ব্যবসায়ী মুকাদ্দেল হোসেন (৬০) জানান, আমার নিজের বাগান থাকলেও আমি প্রতি বছর লিচুর মৌসুমে লিচু ব্যবসায় কেনাকাটা করে থাকি কিন্তু এবার বাগানে লিচুর মুকুল না থাকায় বাগানে বাগানে ঘুরে লিচুর বাগান কিনতে পারছি না।

ঈশ্বরদীর শিমুলতলা বাজারের সরদার ফল ভান্ডার এর আরৎদার মোঃ শাজাহান আলী জানান, প্রতিবারের তুলনায় এবার ফলন কম হওয়ায় তুলনামূলকভাবে লিচুর দাম বেশি থাকবে।

ঈশ্বরদীতে ফল বিপর্যয় নিয়ে ঈশ্বরদী উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ এখলাছুর রহমান জানান, প্রতি বছর সমানভাবে লিচুর গাছে মুকুল আসে না, কোনো বার কম আবার কোনো বার বেশি আসে। তবে এবার তুলনামূলকভাবে অন্যান্য বছরের তুলনায় গাছে মুকুল কম এসেছে। এটা কোন গাছের ক্ষমতা নয় এটা জেনেটিক কারণেই হতে পারে, তবে তিনি আশা করেন আগামী বছর গাছের মুকুলের পরিমাণ সব গাছেই বেশি হবে এবং ফলনও বেশি হবে।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার রূপালী বাংলাদেশকে জানান, চলতি মৌসুমে ঈশ্বরদীতে লিচুর আবাদ কম হবে বলে মনে হচ্ছে। আবহাওয়াজনিত কারণেই এমন হবে। দু’এক সপ্তাহ পরে লক্ষ্যমাত্রা বোঝা যাবে।

আরবি/জেডআর

Link copied!