ঢাকা শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

কেঁচো সার উৎপাদনে ফিরছে নারীদের সচ্ছলতা

আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০২৫, ০১:৪০ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

আধুনিক কৃষিতে কেঁচো কম্পোস্ট সার বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। উৎপাদনে এ যেন এক নতুন সম্ভাবনা। কেঁচো সার চাষ করে অনেক ব্যক্তির ভাগ্যেরও পরিবর্তন ঘটেছে। এতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে প্রাকৃতিক সার ব্যবহারে সুফল পাচ্ছে কৃষক। প্রাথমিকভাবে এসব কৃষকের মনে বিরূপ ধারণা থাকলেও তা কেটে গেছে। এই সার উৎপাদন করে নিজেরা সচ্ছল হওয়ার পাশাপাশি অর্থনীতিতেও অবদান রাখছেন। 

বরিশালে বিভিন্ন এলাকায় রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শুরু হয়েছে কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) উৎপাদন। পরিবেশবান্ধব, লাভজনক ও ফসল বেশি হওয়ায় এ সার উৎপাদনে আগ্রহী হয়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা। এ সার উৎপাদনের মাধ্যমে ক্ষুদ্র কৃষক ও দরিদ্র পরিবারে ফিরেছে সচ্ছলতা। কেঁচো সার ব্যবহারে কৃষকদের ইতিবাচক সাড়াও মিলছে বলে জানায় উপজেলা কৃষি বিভাগ।

জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের মধ্য রাজিহার ও বাশাইল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বেশকিছু পরিবার ও কৃষক একটি প্রকল্পের সহযোগিতায় বাণিজ্যিকভাবে কেঁচো সার উৎপাদন করছেন। আশপাশের কৃষকেরাও ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে বিকল্প হিসেবে কেঁচো সার ব্যবহার করছেন।

রাজিহার ইউনিয়নের বাশাইল গ্রামের বিভা রায় বলেন, ‘একটি প্রকল্পের সহযোগিতায় কেঁচো সার উৎপাদন শিখেছি। এখন সেই পদ্ধতিতে উৎপাদন করে প্রতি কেজি ভার্মি কম্পোস্ট ২০ টাকা করে বিক্রি করছি। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন প্রতি মাসে কেঁচো সার বিক্রি করে মোটামুটি কিছু টাকা লাভও হচ্ছে। গোবর ও কচুরিপানা মিশিয়ে বস্তায় ভরে ৭ দিন রাখা হয়। পরে বস্তা থেকে বের করে সিমেন্টের রিং স্লাবে রেখে সেখানে কেঁচো ছেড়ে দেওয়া হয়। এভাবেই কয়েক দিন পর ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি হয়ে যায়।

মধ্য রাজিহার গ্রামের কালাচান বখশি বলেন, কেঁচো সার উৎপাদন শিখে এখন ভালোই লাভ হচ্ছে। আশেপাশের গ্রামের লোকজনও এসে কেজি হিসেবে কিনে নিচ্ছে। পরিবেশবান্ধব ও বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন হওয়ায় স্থানীয় লোকজনের এ সারের প্রতি আগ্রহ বেশি। বাশাইল গ্রামের আসমা আক্তার বলেন, এ সার ব্যবহার করে আগের চেয়ে ফসল উৎপাদন বেড়েছে। এখন কেঁচো সার উৎপাদন করেও বিক্রি করছি। আবার কেঁচো সার দিয়ে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করেও লাভবান হচ্ছি।

আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইলিয়াস তালুকদার বলেন, কেঁচো সার অত্যন্ত উৎপাদনশীল এবং কার্যকরী একটি জিনিস। আমি নিজেও বিভিন্নজনের কাছ থেকে কেজিপ্রতি ২০ টাকা দরে কিনে নিই। তা ছাড়া রাসায়নিকমুক্ত খাবার খেতে হলে কেঁচো সারের বিকল্প নেই।

কারিতাসের আঞ্চলিক পরিচালক ফ্রান্সিস বেপারী বলেন, ‘এ সার ব্যবহারে জমির উর্বরতা বৃদ্ধিসহ বিষমুক্ত খাবার তৈরি করা সম্ভব। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে অন্যতম উপাদান কেঁচো সার।

বরিশাল অঞ্চলের ধরিত্রী প্রকল্পের মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে ৬৯৪ জন এবং পরোক্ষভাবে ২৪৬৭ জনকে কেঁচো সার উৎপাদনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ফলে গ্রামের ক্ষুদ্র কৃষক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে তারা নিজেদের চাহিদা মিটিয়েও বিক্রি করছেন।

আগৈলঝাড়া উপজেলা কৃষি অফিসার পীযূষ রায় বলেন, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) উৎপাদনে কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এ সার উৎপাদনে কৃষকদের ইতিবাচক সাড়াও মিলছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কৃষকদের যেকোনো সহায়তায় কৃষি বিভাগ পাশে আছে।