‘দশ মিনিট হেঁটে মায়ের সঙ্গে পাহাড়ি ঝরনা (ছড়া) থেকে পানি নিতে এসেছে শিশু জান্নাতুল ফেরদৌস। প্রতিদিন দুইবার মায়ের সঙ্গে এসে এভাবেই খাবার পানি নিয়ে যায় ছয় বছর বয়সী এই শিশুটি।’
নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে শুকনো মৌসুমে পানির সংকট বেশ পুরোনো। ফাল্গুনের শুরু থেকে বর্ষার আগপর্যন্ত পাহাড়ে প্রায় প্রতিটি ঘরে চলে বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য হাহাকার। ফলে পাহাড়ি ঝরনার (ছড়া) ও তার পাশে তৈরি করা কুয়োর পানিতেই চলছে তাদের জীবনযাপন।
সম্প্রতি উপজেলার সীমান্তবর্তী চন্দ্রডিঙা এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, শিশু জান্নাতুল ফেরদৌস তার মা শহর বানুর সঙ্গে পাহাড়ি ছড়ার (নালার) পাশে কুয়োর দিকে যাচ্ছে। কেননা সরকারের দেয়া গভীর কূপ থেকে পানি আয়রন বের হয়। কুয়ার পানি কিছুটা পরিষ্কার হওয়ায় সেখানে ছোট কলস হাতে ছুটে যাচ্ছে শিশুটি। সেখানে নালার পাশে কুয়া থেকে পানি তুলবে। কিছুক্ষণ পর পানি সংগ্রহ করে কলসি মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরেছে শিশুটি। শিশু জান্নাতুল ফেরদৌস উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের তাজুল ইসলাম ও শহর বানু দম্পতির ছোট মেয়ে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সীমান্তবর্তী রংছাতি, খারনৈ ও লেংগুরা ইউনিয়ন। এই তিনটি ইউনিয়নের শুকনো মৌসুমে অন্তত ৩৫টি গ্রামের প্রায় ১৮ হাজার মানুষ পানির কষ্টে থাকে। ওই এলাকাগুলোতে গারো, হাজং ও কিছু বাঙালি সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। প্রতি বছরেই পানির সংকটে ভরসা হয়ে পড়ে পাহাড়ি ছড়া, খাল ও কুয়ার পানি। আর যা কয়েকটি গভীর কূপ বসানো হয়েছে সেখানে থেকে বের হয় আয়রনযুক্ত পানি৷
কুয়া থেকে পানি নিতে আসা চন্দ্রডিঙ্গা গ্রামের গৃহিণী রীতা মারাক জানান, তিনি দরিদ্র মানুষ। চন্দ্রডিঙা এলাকায় বিগত সরকারের বসানো গভীর কূপ থেকে বেশ কিছুদিন পানি সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু বর্তমানে সেখান থেকে পানির সঙ্গে আয়রন বের হয়।
তিনি বলেন, আয়রন পানি খাওয়ার চাইতে নালার পানি অনেক ভালো। শুকনোর সময় পানির অনেক কষ্ট। কি করা যাবে- বাধ্য হয়ে এই পানি দিয়েই রান্নাবান্না, খাবারসহ সব চলে।
লেংগুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, আমার ইউনিয়নের সীমান্তের কাঁঠালবাড়ী, গোপালবাড়ী, ফুলবাড়ী`সহ অনেক গ্রামে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট রয়েছে। বিগত সরকারের আমলে সীমান্তে গভীর নলকূপ নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। আর সীমান্তে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে ভোগছে মানুষ।
সীমান্তে বেশ কিছু এলাকায় গভীর কূপ সরকারিভাবে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন কলমাকান্দা উপজেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, পাহাড়ি এলাকায় পাথরের জন্য নলকূপ বসানো সম্ভব হয় না। তবে বেশ কিছু গভীর কূপ বসানো হয়েছে। এসব কূপে আয়রনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, নলকূপ না বসাতে পারায় আয়রন হচ্ছে।
জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান বলেন, কলমাকান্দা সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। সীমান্তে বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য গভীর নলকূপ স্থাপনের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সমস্যা সমাধান হবে।
আপনার মতামত লিখুন :