লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে মেঘনা নদীর ভাঙনে ভিটেমাটিসহ সর্বস্ব হারান সালমা আক্তার। পরে ধারদেনা ও জমানো টাকায় নতুন জমি কিনে বসতবাড়ির স্বপ্ন দেখেন তিনি। তবে ভেস্তে গেছে তার সেই স্বপ্ন। জমির জন্য দেওয়া ১২ লাখ টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে গেছে একটি প্রতারক চক্র। এখন টাকা কিংবা জমি পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে সালমার পরিবার। কিন্তু মিলছে না কোনো প্রতিকার।
ভুক্তভোগী সালমা কমলনগরের চরফলকন ইউনিয়নের চরফলকন গ্রামের মো. শাকিলের স্ত্রী ও চরলরেন্স ইউনিয়নের উত্তর চরলরেন্স গ্রামের কৃষক নুরুল হকের মেয়ে।
সালমা ও তার বাবা নুরুল হকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় পাঁচ বছর আগে মেঘনার ভাঙনে ভিটেমাটি তলিয়ে যায় তার। এতে সালমার শ্বশুর বাড়ির ৬ পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। কঠিন বাস্তবতায় ৫ সদস্যসহ কৃষক বাবার বাড়িতে ঠাঁই নেন সালমা। কিন্তু বাবার বাড়িতেও বছরের পর বছর ঠাঁই নেওয়া যাচ্ছিল না। ফলে নিজের বসতঘর নির্মাণের স্বপ্ন দেখেন।
স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কাজ করে ও মা-বাবাসহ প্রতিবেশীদের সহযোগিতা এবং ঋণ নিয়ে কিছু টাকা যোগাড়ও করেন। এরপর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের চরকাদিরা গ্রামে আড়াই একর জমি পছন্দ হয় তার। এতে পরিচয় হয় নাসির মাঝিসহ কয়েকজনের সঙ্গে। জমিটি ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করবে বলে তারা জানায়। এ সময় দরদামে ১৫ লাখ টাকায় কিনতে রাজি হন সালমা। পরে আলোচনা শেষে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে চুক্তি করে জমির জন্য নাসিরসহ অভিযুক্তদের ১২ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়।
২০২১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি এ চুক্তি সম্পাদন হয়। এর কয়েকদিন পর জমি পরিমাপ করে দেওয়া হয়েছিলো। ওই জমিতে সালমা নতুন আইল তৈরি ও বসতঘরের জন্য ভিটে তৈরি করেন। একপর্যায়ে জমি রেজিস্ট্রির জন্য প্রস্তুতি নেন। এরমধ্যে নাসিরের সহযোগী কামাল করোনায় মারা যান। তার মৃত্যুর পরই ঘটনা ভিন্ন রূপ নেয়। এর ২-৩ দিনের মধ্যেই সালমাকে ওই জমি থেকে বের করে দেওয়া হয়। তখন তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন অভিযুক্তরা। পুলিশ ও স্থানীয়ভাবে একাধিকবার বৈঠকে নাসির টাকা অথবা জমি রেজিস্ট্রি করার কথা স্বীকার করলেও পরে অস্বীকার করেন।
এখন কয়েক বছর ধরে জমি অথবা টাকা ফিরে পেতে তাদের পেছনে হাঁটছেন অসহায় সালমা। কিন্তু কোনো প্রতিকার মিলছে না।
সালমার বাবা নুরুল হক বলেন, নাসির আমার মেয়ের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। রাগে ক্ষোভে ৩ সন্তান নিয়ে সালমাকে তার স্বামী আমার বাড়ি ফেলে গেছে। খোঁজও নিচ্ছে না। টাকা ও মেয়ের চিন্তায় আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। এ ঘটনায় নাসির মাঝিসহ চারজনের বিরুদ্ধে লক্ষ্মীপুর আদালতে মামলা করা হয়েছে। আদালত মামলাটি কমলনগর থানাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
অভিযুক্ত নাসির একই উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড চরকাদিরা গ্রামের ছৈয়দ আহম্মদের ছেলে ও পেশায় ইটভাটার শ্রমিক সর্দার। অভিযুক্ত অন্যরা হলেন নাসিরের প্রধান সহযোগী কামালের স্ত্রী স্বপনা বেগম ও বাবা বশির মাঝি।
নাম প্রকাশ্যে নাছিরের ৫ প্রতিবেশী জানান, নাসির একজন প্রতারক। নদীভাঙা অসহায় মানুষকে টার্গেট করে তিনি প্রতারণার জাল বিছিয়ে রেখেছেন।
এসব বিষয়ে নাসির উদ্দিন মাঝি বলেন, জমির জন্য ১২ লাখ টাকা আমি একা নেইনি। আমার সহযোগী কামালও নিয়েছেন। কামাল মারা গেছেন। এতে কামালের বাবা বশির মাঝি তার মেয়ে ও পুত্রবধূর নামে জমি রেজিস্ট্রি করে দেন। আমি বাধা দিলেও বশির মাঝি আমার কথা শোনেননি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কমলনগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাফেজ আহাম্মদ খান বলেন, জমি বিক্রি করবে বলে অভিযুক্তরা বাদীর কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা নিয়েছে। তদন্তে সত্যতা পেয়েছি। সম্প্রতি আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। নদীভাঙনে সর্বস্ব হারানো সালমা প্রতারণার শিকার হয়ে এখন পাগলের মতো বিলাপ করছেন।