ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০২৫

বনখেকো দালালদের খপ্পরে দিশাহারা নিম্নবিত্তরা

শহীদুজ্জামান, কালিয়াকৈর (গাজীপুর)
প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২৫, ১০:১৮ এএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর একটি শিল্পবেষ্টিত জনবহুল এলাকা হওয়ায় জমির মূল্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই সুযোগকে পুঁজি করে এক সময়ের ভাওয়ালের গড়খ্যাত গাজীপুরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কালিয়াকৈর উপজেলায় এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তিরা বিভিন্ন কৌশলে (সরকারি বন বিভাগের জমিতে) সাধারণ মানুষকে বাড়ি করে দেওয়ার লোভে ফেলে নানা কায়দায় লুটে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অপরদিকে সাধারণ খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের প্রলোভনে পড়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন হরহামেশা।

বিভিন্ন তথ্য সূত্র থেকে জানা যায়, সাধারণত দুই রুম আয়তনের একটি ছাপড়া ঘর বা টিনের দোচালা ঘর করতে বনবিভাগের আস্থাভাজন নির্ধারিত দালাল চক্রকে ৫০ হাজার থেকে দেড়-দুই লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। এরপর ঘর তৈরি করার কাজ শুরু করতেই শুরু হয় ভোগান্তি নামের অন্য আরেক অধ্যায়। 

নির্মাণাধীন ঘরের কাছে এসে হাজির হয় একের পর এক বিভিন্ন নামধারী আইপি টিভি, প্রিন্ট ও অনলাইন পত্রিকাসহ ইলেকট্রনিক মিডিয়ার তথাকথিত সংবাদকর্মীরা।  এভাবে দালাল চক্রের নানা কৌশলে ভোগান্তির শিকার হয়ে নিম্নবিত্ত আয়ের অসহায় মানুষগুলো দিশাহারা হয়ে পড়েছে।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে ভুক্তভোগী এক নারী বলেন, ‘২ লাখ টাকা খরচ কইরা ঘর দিছি, এরপরেও শান্তি নাই, মধ্যে মধ্যে সাংবাদিক আইসা হুমকি-ধমকি দেয়। টাকা না দিলে নিউজ করব, তখন বাধ্য অইয়া ধারদেনা কইরা দিয়া দেই।’

পৌরসভার হাবিবপুর এলাকার বাসিন্দা (অটোচালক) আব্দুল মোমেন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন,     ‘১৭ বছর ধইরা এই এলাকায় আছি, বউ চাকরি করে স্টার্লিং ফ্যাক্টরিতে; আমি নিজে অটো চালাই। সক হয়েছিল একটা বাড়ি করমু, দালালের সাথে কথা বলে দেড় লাখ টাকা মিটাইয়া কাজ শুরু করি; এরপর আসে একে একে সাংবাদিকরা, টাকা না দিলে ঘর ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেয়, বাধ্য হয়ে দিতে হয়।’

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, বন বিভাগে কর্মরত কতিপয় অসাধু অফিসার এবং কথিত দালাল চক্র মিলে নিম্নবিত্ত সাধারণ মানুষকে টার্গেট করে এ ধরনের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।

পরিবেশের এই বিপন্নতা নিয়ে বন বিভাগ একেবারেই উদাসীন। বনের জমি দখলদারদের বিরুদ্ধে বন বিভাগ জিরো টলারেন্স থাকার ঘোষণা দিলেও মাঠপর্যায়ে এ ঘোষণা তেমন কার্যকর হচ্ছে না। গুটিকয়েক বনকর্তা ভূমিদস্যুদের সঙ্গে আঁতাত করায় বনের জমি দখলের হিড়িক আগের চেয়ে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ। চিহ্নিত এই বনভূমি দখলবাজরা ভবন নির্মাণ করে ভাড়া দিলেও সংশ্লিষ্ট বনকর্তারা তাদের আইন প্রয়োগে রহস্যজনক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।

গাজীপুরের কালিয়াকৈর পৌরসভা, মৌচাক ইউনিয়ন, চাপার ইউনিয়ন ও বোয়ালী ইউনিয়নের এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, বনভূমি ও বনের সংরক্ষিত গেজেটভুক্ত প্রায় হাজার বিঘা জমি এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল ও স্থানীয় কতিপয় দালাল চক্রের তদবিরকারীদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বনের জমি দিনে-রাতে বন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে দখল প্রতিযোগিতায় মাঠে নেমেছে ওই অসাধু মহলটি। 

এদিকে কেউ কেউ আবার শুধু দখলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, জমি দখল করে নিজের কব্জায় রেখে পজিশন বিক্রির হিড়িক পড়েছে এই ইউনিয়নগুলোতে। আর এর ফলে কেউ আঙুল ফুলে হচ্ছে কলা গাছ। এতে করে একদিকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বনাঞ্চল, অপরদিকে বনখেকো দালালদের খপ্পরে পড়ে ঘাম ঝরানো সঞ্চয় হারিয়ে দিশাহারা হচ্ছে ভুক্তভোগী অসহায় মানুষগুলো।

ঘর করে দেওয়ার কথা বলে চক্রে জড়িত দালাল শ্রেণি আগেই টাকা নিয়ে রাখে। এক বছর পার হলেও এখনো ঘর করে দেয়নি বলে আক্ষেপ করেন কালিয়াকৈরের বিশ্বাস পাড়ার আব্দুল জব্বার (৪৯) নামের এক ভুক্তভোগী। ‘ঘর ওঠাইতেও দেয় না, ট্যাহা চাইলেও দুর্ব্যবহার করে, এ বিচার কার কাছে দিমু।’

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত এসিএফ শহিদুল আলম শাহীন কোনো ধরনের মন্তব্য করতে অপরাগতা জানান, উপরন্তু কর্মকর্তাদের সাথে কথা না বলে বক্তব্য দেওয়া যাবে না বলে দাবি করেন তিনি।