গ্রেপ্তার আতঙ্কে কর্মস্থল থেকে পালিয়ে গেছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা। তিনি আওয়ামী লীগ শাসনামলে জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলন প্রতিরোধে আগ্রাসী ভূমিকা পালন করেছেন।
বরিশাল ট্রাফিক বিভাগের এডিসি রাশেদুল ইসলাম নামের এই কর্মকর্তা জুলাই মাসে আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর গুলিয়ে চালিয়েছেন। বিশেষ করে রাজধানীর রামপুরায় ভবনের কার্নিশে ঝুলে থাকা জনৈক আন্দোলনকারীকে প্রকাশ্যে গুলি করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় করা মামলায় তিনি অভিযুক্ত বলে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ অফিস সূত্রে জানা গেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, তিন দিন আগে, অর্থাৎ গত রোববার থেকে এডিসি রাশেদুল ইসলাম ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাউকে কিছু অবহিত না করে শহরের শীতলাখোলাসংলগ্ন ট্রাফিক অফিস থেকে বের হয়ে গেছেন। এরপর থেকে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন বন্ধ থাকার পাশাপাশি তিনি কর্মস্থলে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না।
বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি পুলিশ এডিসি রাশেদুল ইসলামের সন্ধানে কাজ শুরু করেছে। পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, জুলাই মাসে রামপুরায় ভবনের কার্নিশে ঝুলে থাকা যুবককে গুলির ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং তাতে তিনি অভিযুক্ত- এ তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পরপরই রাশেদুল মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে অন্তর্ধানে চলে গেছেন গ্রেপ্তার এড়াতে। এর আগে তিনি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বদলি হয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটনে আসেন।
বরিশাল ট্রাফিক পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রামপুরায় আন্দোলনকারীকে গুলি করার বিষয়টি এতদিন অজানা থাকলেও এডিসি রাশেদুল ইসলামের মুভমেন্ট ছিল সন্দেহজনক।
তিনি জুলাই-আগস্ট মাসে আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে কাজ করলেও বদলি হয়ে বরিশালে এসে ছিলেন একেবারে নিশ্চুপ। এ নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের দীর্ঘদিন ধরে নানান কানাঘুষা চলছিল। এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে ঢাকায় মামলার বিষয়টি আলোচনায় আসতেই এডিসি রাশেদুল ইসলাম কর্মস্থল বরিশাল ট্রাফিক অফিস ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
তবে তিনি গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে গেছেন কি না, তা নিয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম কোনো মন্তব্য না করলেও বলছেন, এডিসি রাশেদুল ইসলামের তিন দিন ধরে কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ তার সন্ধানে কাজ করছে।
ট্রাফিক পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, গত রোববার অফিস চলাকালে মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে গেছেন এডিসি রাশেদুল ইসলাম। অনুমান, ওই দিনই তিনি কোনো মাধ্যম থেকে নিশ্চিত হন যে তার বিরুদ্ধে ঢাকায় হত্যা মামলা হয়েছে। মূলত এর পরপরই তিনি গ্রেপ্তার এড়াতে কর্মস্থল ছেড়ে পালিয়েছেন।
পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলছেন, কর্মস্থল থেকে পুলিশ কর্মকর্তা নিরুদ্দেশ হওয়ার বিষয়টি তিনি হেডকোয়াটার্সকে অবহিত করেছেন। সেখান থেকে কী নির্দেশনা আসে, সেই আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, জুলাই মাসে ভবনের কার্নিশে ঝুলে থাকা যুবককে গুলি করার ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। হৃদয়বিদারক ওই ঘটনার ভিডিও চিত্র গোটা দেশবাসীকে হতবাক করেছিল
আপনার মতামত লিখুন :