ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০২৫

কমলগঞ্জে ফসলি জমিতে মাটি কাটার মহোৎসব

তানভীর চৌধুরী, কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২৫, ০২:১৫ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নে কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার মহোৎসবে মেতে উঠেছে প্রভাবশালী মহল। শীতের শুরু থেকে বিভিন্ন হাওড়ে সরকারি, বেসরকারি, ব্যক্তি মালিকানাধীন কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি এক্সোভেটর (ভেকু) দিয়ে কেটে চলছে বিক্রি।

ট্রাক বোঝাই করে এসব মাটি নেওয়া হচ্ছে বসতভিটার জায়গা ভরাট করার কাজে। মাটি কেটে নেওয়ার পাশাপাশি গভীর গর্ত করে মাটি কেটে বিক্রি ও বিভিন্ন বাসা বাড়ির উঠানে ভরাট করছে এই চক্র। কৃষি জমি ধ্বংসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, নষ্ট হচ্ছে জমির ফসল ও উৎপাদনের উপযোগিতা হারানোর পাশাপাশি রাস্তাঘাটের বেহাল দশা।

সরেজমিনে দেখা যায়, আর্থিকভাবে সাময়িকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় অনেক কৃষক তাদের জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে ফসল উৎপাদন ব্যাপকহারে হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। এ অঞ্চলের অধিকাংশ জমিই উর্বর পলি মাটি সমৃদ্ধ। এসব জমিতে বছরে দু’টি মৌসুমে ধান আউশ ও আমন রোপন করা হয়, কিন্তু কিছু অসাধু মাটি ব্যবসায়ী কৃষকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে এসব জমির টপ সয়েল কিনে নিচ্ছেন।

কমলগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শমশেরনগর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে দুই বা তিন ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে বিক্রির হিড়িক পড়েছে। বড় বড় ট্রাকে এসব মাটি পরিবহনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তাঘাটও। নানা দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে চলাচল করতে হচ্ছে এসব রাস্তায়।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছু রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় কিছু মাটি ব্যবসায়ী প্রতি বছরের ডিসেম্বর থেকে শুরু করে মার্চ পর্যন্ত মাটির ব্যবসা করেন। তারা কৃষকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে জমির এক থেকে দেড় ফুট মাটি কিনে নিয়ে চড়া দামে ইটভাটায় বিক্রি করেন। এছাড়া বাড়ি তৈরিতে মাটি ভরাট প্রয়োজন হলেও অনেকে ব্যবসায়ীর দ্বারস্থ হন। ফলে অল্প সময়েই মাটি ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকা রোজগার করেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি নন কৃষক। নাম প্রাকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা হয় তারা জানান, জমির উপরের অংশ থেকে দু-এক ফুট পরিমাণ মাটি তারা বিক্রি করছেন। এতে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। জমির মাটি কেটে নিলে ফসল আরও ভালো হবে বলেও মনে করেন কৃষকেরা। তারা নিজেদের জমির মাটি বিক্রি করছেন। এতে কারও কিছু করার নেই।

কমলগঞ্জ কৃষি কর্মকতা জয়ন্ত কুমার রায় বলেন, “টপ সয়েল জমির প্রাণ। জমির উপরের থেকে ৬ ইঞ্চিই হলো টপ সয়েল। আর ওই অংশেই থাকে মূল জৈবশক্তি। কৃষকরা জমির টপ সয়েল বিক্রি করে নিজেদের পায়ে কুড়াল মারছেন। মাটি বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে তারা জমির উর্বরতা শক্তিই বিক্রি করে দিচ্ছেন। জমির এ ক্ষতি ১০ বছরেও পূরণ হবে না।”

তিনি আরও বলেন, “যেভাবে মাটি বিক্রি হচ্ছে তাতে করে ফসল উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেতে পারে। এসব বিষয়ে কোনো নীতিমালা না থাকায় কৃষক ও মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। তবে বিভিন্ন সময় কৃষকদের টপ সয়েল বিক্রি থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”

কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ডিএম সাদিক আল শাফিন বলেন, কৃষি জমির মাটি কাটার বিষয়ে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, “এটা পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর, তাই এ ব্যাপারে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।