ঢাকা শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০২৫

সরকারি খাল এখন ব্যক্তি মালিকানায়, জলাবদ্ধতার শিকার লক্ষাধিক মানুষ

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ১৪, ২০২৫, ০৩:৫৩ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

কালো টাকার বিনিময়ে সরকারি খাল ব্যক্তি মালিকানায় নিয়ে নেওয়ায় সাতক্ষীরা জেলার চারটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ বর্ষা মৌসুম আসলেই ভয়াবহ জলবদ্ধতা স্বীকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগ উঠেছে যে, এই খালটি কালো টাকার বিনিময়ে ব্যক্তি মালিকানায় গ্রহণ করার ফলে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে।

স্থানীয়রা বলছেন, এর ফলে তারা বছর বছর ধরে জলাবদ্ধতায় ভুগছেন, তাদের জমিতে ফসল উৎপাদন করতে পারছেন না এবং বর্ষায় বাড়িঘরও হাঁটু পানি ডুবে থাকে। এমনকি শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারছে না, যার ফলে তাদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত হচ্ছে।

অভিযোগ উঠেছে যে, এই খালটি কালো টাকার বিনিময়ে ব্যক্তি মালিকানায় গ্রহণ করা হয়েছে। এই খালটি আগে হাবাসপুর, কুলতিয়া, গোবরাখালী, সাতক্ষীরা পৌরসভা এবং সদর উপজেলার ফিংড়ি, ধুলিহর এবং আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ও কুল্লা ইউনিয়নের পানির নিষ্কাশন একমাত্র মাধ্যম ছিল। কিন্তু বর্তমানে এই খালটি দখল হয়ে যাওয়ার ফলে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থানীয়দের জীবনে এক গভীর সংকট তৈরি হয়েছে।

স্থানীয়রা বলেন, এই খালে আগে আমরা মাছ ধরতাম, গোসল করতাম। কিন্তু এখন সেই খালটি দখল হয়ে গেছে। আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই খাল ছিল। আমরা বহুবার চেষ্টা করেছি খালটি খনন করতে, কিন্তু স্থানীয় কিছু ব্যক্তি আমাদের বাধা দিয়েছেন।

যার কারনে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ার কারণে সাতক্ষীরা পৌরসভাসহ সদর উপজেলার ফিংড়ি ও ধুলিহর এবং আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ও কুল্লা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের প্রায় লক্ষাধিক বিঘা জমিতে ধান চাষ করা সম্ভব হয়নি এবং বাড়িঘরও হাঁটু পানির নিচে তলিয়ে থাকে। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে না পারার কারণে তাদের শিক্ষাজীবনেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোইয়াাব আহম্মাদ জানিয়েছেন, তিনি অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং কাগজপত্রও পর্যালোচনা করেছেন। তবে সিএস ম্যাপে খালটি সরকারি জমি হিসেবে চিহ্নিত হলেও, হাল ম্যাপে (আরএস ম্যাপে) এটি ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি হিসেবে দেখানো হয়েছে।

তিনি আরও জানান, যদিও আইনি বিধান না থাকলেও কীভাবে এটি ইজারা দেয়া হলো এবং খালের জমি ব্যক্তি মালিকানায় রূপান্তরিত হলো, তা তদন্ত করে দেখছি। তদন্ত শেষে যারা এই অপতৎপরতার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে স্থানীয় সরকারও তাদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তবে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এর ফলে জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে স্থানীয়রা মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

এই সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে, এলাকাবাসীর জমিতে কৃষিকাজ ও সাধারণ জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্থসহ আরও বড় বিপদ হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। গ্রামবাসীরা এখন প্রশাসনের কাছে জোর দাবি করছেন দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করে জলবদ্ধতার হাত থেকে তাদেরকে মুক্তি দেওয়ার জন্য।