স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও হয়নি যে সেতু!

গজারিয়া (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: মার্চ ১৪, ২০২৫, ০৭:৪৩ পিএম

স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও হয়নি যে সেতু!

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

মুন্সীগঞ্জের মেঘনার ও তার শাখা ফুলদী নদী গজারিয়া উপজেলাকে জেলা শহর থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে সেতু নির্মাণ না হওয়ায় অনেক সম্ভাবনার মেঘনা তীরের জনপদটিতে তৈরি হয়েছে নানা বৈরীক চ্যালেঞ্জ। ফুলদী নদীর দুই পাড়েই সরকারি অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজসহ নানা প্রতিষ্ঠান থাকায় নদী পারাপারে ঘটছে দুর্ঘটনাও। একটি সেতুর না থাকায় এখানকার কৃষি ও শিল্পভিত্তিক অর্থনীতিসহ এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

গজারিয়া ইউনিয়নবাসী ফুলদী সেতু নির্মাণ হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জামালদী হয়ে ভবেরচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও থানায় গজারিয়া ইউনিয়নবাসীকে ১৫ কিলোমিটার সড়ক পদক্ষিন করতে হবে না।

স্থানীয়রা বলছেন, সেতুটির অভাবে জনদুর্ভোগ এখন চরমে। ২০০৪ সালে গুরুত্ব বিবেচনায় সরকার ফুলদী নদীতে সেতু নির্মাণে ৩০০ মিটার দীর্ঘ ফুলদী সেতু নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৩০০ কোটি টাকা।

এদিকে ভিত্তি প্রস্তরের দুই দশকেরও বেশি সময় সেতু হয়নি ফুলদী নদীতে। তাই ফেরি আর খেয়া নৌকাই ভরসা। রাতে তাও মিলছে না। তাই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ পড়েছে দুর্ভোগে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে গজারিয়া উপজেলার গণমানুষের প্রাণের দাবি ছিল ফুলদী নদীতে একটি সেতু। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই সেতু নির্মাণে ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করা হয়। এদিকে প্রতিদিন ভোগান্তির মধ্য দিয়ে খেয়া পারাপার হচ্ছেন উপজেলার লাখো মানুষ।

গজারিয়া উপজেলার রসুলপুর খেয়াঘাটে উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবিতে ২০০৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন চার দলীয় জোট সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২১ বছর অতিবাহিত হলেও ফুলদী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা হয়নি। নদীর রসুলপুর প্রান্তে শুধু ভিত্তিপ্রস্তরের ফলক নির্মাণ পর্যন্তই রয়েছে সেতু নির্মাণ কাজ।

স্থানীয়রা জানায়, ভিত্তিপ্রস্তরের পর ২১ বছরেও গজারিয়ার ফুলদী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ না হওয়ায় রসুলপুর, দৌলতপুর, ইমামপুর, আঁধারমানিক, করিম খাঁ, মাথাভাঙ্গা, গজারিয়া, গোসাইরচর, নয়াকান্দি, হোসেন্দী, ইসমানিরচর গ্রামের লাখো মানুষ ব্যাপক দুর্ভোগের মধ্যে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার দিয়ে ফুলদী নদী পাড়ি দিয়ে জীবনযাপন অব্যাহত রেখেছে।

এ ছাড়া এসব গ্রামে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী প্রতিদিন এই ফুলদী নদী পাড়ি দিয়ে গজারিয়া সরকারি পাইলট হাইস্কুল, গজারিয়া পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, গজারিয়া বাতেনিয়া আলিম মাদ্রাসা, মাথাভাঙ্গা মহিলা আলিম মাদ্রাসা ও গজারিয়া সরকারি ডিগ্রি কলেজে ও কলিমুল্লাহ্ ডিগ্রী কলেজে পড়ালেখা করছে।

এদিকে, গজারিয়ার যে ইউনিয়নটি আছে সেটি মেঘনার শাখা নদী ফুলদী নদী দ্বারা বিভাজিত। সে কারণে এলাকার জনগণের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। প্রশাসনিক সেবা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কেননা দুই পাড়ে সরকারি অফিসসমূহ অবস্থিত। ফুলদী নদীর ওপর দিয়ে ব্রিজ তৈরি হয় তাহলে গজারিয়াবাসীর সেবা পাওয়া সহজ হবে। গুরুত্ব বিবেচনায় সরকার ফুলদী নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই সহ অন্যান্য কারিগরি কার্যক্রম শুরু করেছে।

উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের আধারমানিক গ্রামের বাসিন্দা এবায়েদুল্লা জাহিদ জানান, গজারিয়া পাড়ে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শত শত কোমলমতি শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন এই নদী ট্রলারে করে ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে। ছোট ছোট ট্রলারে করে নদী পাড় হওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এই সেতু নির্মাণ এখন গজারিয়াবাসীর প্রাণের দাবি।

গজারিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা রুহুল আমিন জানান, জন্মের পর থেকে খেয়া নৌকা দিয়ে পাড়াপাড় হচ্ছি। এ খেয়া দিয়েই প্রতিদিন হাজারও শিক্ষার্থী পাড় হয়ে লেখাপড়া করছে।  যে ফেরি ও ট্রলার বর্তমানে সার্ভিস দিয়ে অনেক কষ্ট হয়। আর ঝড় বৃষ্টিতে বন্ধ থাকে, এতে বিপাকে পড়তে হয় আমাদের।

গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম জানান, গজারিয়ার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ফুলদী নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের। নদীতে ৩০০ মিটার একটি ব্রিজের কার্যক্রম সরকার পরিকল্পনা প্রনয়নের কাজ হাতে নিয়েছে। এ বিষয় ডিপিপির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমরা আশা করছি এ অর্থ বছর না হলে, আগামী অর্থ বছর প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তবে, ২০০৪ সালের ভিত্তিপ্রস্ত স্থাপনের বিষয় জানা নেই। 

আরবি/জেডআর

Link copied!