হাসপাতালে রোগী দেখেন ফার্মাসিস্ট-নার্স

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: মার্চ ১৪, ২০২৫, ০৮:৫৮ পিএম

হাসপাতালে রোগী দেখেন ফার্মাসিস্ট-নার্স

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দেড় যুগেও পুর্ণতা পায়নি ময়মনসিংহের সদর উপজেলার পরানগঞ্জ এলাকার চরাঞ্চল ২০ শয্যার হাসপাতাল। বিএনপি সরকারের আমলে নির্মিত এ হাসপাতাল সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন চরাঞ্চলের দুই লক্ষাধিক মানুষ। হাসপাতালের কমপ্লেক্স ও স্টাফদের আবাসন ভবন থাকলেও নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও লোকবল। প্রায়ই চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে রোগী দেখেন ফার্মাসিস্ট, নার্স ও স্টাফরা। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন সেখানকার মানুষ।

চরাঞ্চলবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে ময়মনসিংহের সদর উপজেলার পরানগঞ্জে নিজ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ২০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ করে দেয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। হাসপাতালটি উদ্বোধনের পরপরই ক্ষমতা হারায় বিএনপি। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দীর্ঘ ১৮ বছর অতিবাহিত হলেও ২০ শয্যার এ হাসপাতালটিতে নিয়োগ হয়নি প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও লোকবল। অভিযোগ রয়েছে বিএনপি সরকারের আমলে হাসপাতালে বরাদ্দকৃত বেড, এক্স-রে মেশিনসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামাদি নিজ এলাকা গৌরীপুরে নিয়ে যান আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালীন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান এমপি।

স্থানীয়রা বলছেন, বিএনপি সরকার হাসপাতাল ভবনসহ চিকিৎসক ও স্টাফদের বেশ কয়েকটি আবাসন ভবন নির্মাণ করে গেলেও বিগত ১৮ বছরেও হাসপাতালটি ইচ্ছেকৃত ভাবে চালু করেনি আওয়ামী লীগ সরকার।

সম্প্রতি হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায়, সেবা নিতে দীর্ঘলাইনে ১৫০-২০০জন মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। তিনজন চিকিৎসক থাকলেও এদিন কেউ কর্মস্থলে যাননি। একজন ফার্মাসিস্ট ও নার্স রোগীদের কাছ থেকে রোগের বর্ণনা শুনে প্যারাসিটামল আর মেট্রোনিডাজল ট্যাবলেট দিচ্ছেন।

স্থানীয়রা বলছেন, প্রায়ই চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে রোগী দেখেন ফার্মাসিস্ট ও নার্স। এতে তারা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। এছাড়া হাসপাতালের ভবন ও কোয়ার্টারগুলো পরিত্যক্ত থাকায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।  

সেবা নিতে আসা বোররচর ভাটিপাড়া গ্রামের আবু হানিফা বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্ট ও গ্যাস্টিকের যন্ত্রণায় ভুগছি। এখানে আসার পর তারা আমাকে এক পাতা ট্যাবলেট দিয়েছে। তা খেলে নাকি ভালো হয়ে যাব। হাসপাতালটি পুরোপুরি ভাবে চালু হলে ভর্তি থেকেও চিকিৎসাসেবা নেয়া যেত।

বীর বওলা গ্রামের আরেকজন রোগী মো. হানিফ বলেন, আমার গলাব্যথা তাই এসেছিলাম হাসপাতালে। কিন্তু এসে কোনো ডাক্তার পাইনি। যারা আছেন তারাই আমাকে দেখে গলাব্যথার জন্য নাপা টেবলেট দিয়েছে।

সাবেক ইউপি সদস্য গোলাম আব্বাস বাবুল বলেন, বিএনপির আমলে হাসপাতালটি নির্মাণ হওয়ার কারণে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি। যার কারণে এই অঞ্চলের দুই লক্ষাধিক মানুষ ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সেবা বঞ্চিত হয়েছে। তারা হাসপাতালটির বেডসহ যাবতীয় সরঞ্জামাদিও অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। আমরা এখন চাই এই অঞ্চলের মানুষের সেবা নিশ্চিতের স্বার্থে পূর্ণাঙ্গভাবে হাসপাতালটি চালু হোক।

আলী আজগর নামে স্থানীয় আরেকজন বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রতিহিংসার জন্য হাসপাতালটি জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। তিনজন চিকিৎসক থাকলেও প্রায় সময়েই তারা আসেন না। রোগিদের সেবা দেন স্টাফরা। এতে তারা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে। বিশেষকরে এই এলাকা থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। হাসপাতালটি পুরোপুরি ভাবে চালু হলে গর্ভবতী মায়েদের জন্য অনেক সুবিধা হতো। আমরা চাই জনবল নিয়োগের মাধ্যমে সম্পন্ন ভাবে প্রতিষ্ঠানটি এলাকার মানুষের কথা চিন্তা করে চালু করা হোক।

তিনজন চিকিৎসকের মধ্যে একজন ডেপুটেশনে, আরেকজন ছুটিতে এবং অন্যজন সদরে প্রশিক্ষণে থাকায় রোগিদের কাছ থেকে রোগের কথা শুনে ওষুধ দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়ে হাসপাতালটির ফার্মাসিস্ট মিন্টু দে বলেন, টিকিটের মাধ্যমে প্রতিদিন ২০০-২৫০জন মানুষ সেবা নিয়ে থাকেন। চিকিৎসকরা না আসায় রোগের কথা শুনে প্যারাসিটামল, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন টেবলেট দেয়া হচ্ছে। এতে করে রোগিরা কোন সমস্যায় পড়বে না।

সিনিয়র স্টাফ নার্স রেখা খাতুন বলেন, জনবল সংকটের কারণে আমরা প্রায়ই নিজেরাই ওষুধ দিয়ে থাকি। রোগিরা আমাদের কাছে তাদের সমস্যার কথা বললে আমরা বুঝে ওষুধ দিতে কোন সমস্যা হয় না।

সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শাহজাহান কবির জানান, হাসপাতালটিতে ২৩ জনের জনবল চাহিদা থাকলেও ১৩ জনের পদ শূন্য রয়েছে। জনবল সংকটের কারণে হাসপাতালটি চালু করা সম্ভব হয়নি। হাসপাতালটি চালু করতে ৪৬ জনের একটি জনবল কাঠামো গঠন করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। নিয়োগ কাজ সম্পন্ন হলে চরাচঞ্চলের মানুষের শতভাগ সেবা নিশ্চিত হবে।

আরবি/জেডআর

Link copied!