ঢাকা শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫

সূর্যমুখী চাষে সফল ইফরান, দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়

কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ১৫, ২০২৫, ১২:০০ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

হলুদ রঙের ফুলে মৌমাছির গুঞ্জন আর মন মাতানো ঘ্রাণ মুখরিত হয়ে উঠেছে সূর্যমুখী ফুলের মাঠ। উঁচু করে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি সূর্যমুখী ফুল। বাতাসে দুলতে থাকা ফুলগুলো যেন আমন্ত্রণ জানাচ্ছে সৌন্দর্য উপভোগ করতে। চোখ জুড়ানো এমন সৌন্দর্য উপভোগ করতে দিনভর এ সূর্যমুখী বাগানে ভিড় করছেন শত শত মানুষ।

শস্য ফুলের পাশাপাশি এ সূর্যমুখীকে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে কৃষকদের। উৎসাহী হয়ে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার হালুয়াপাড়ায় সূর্যমুখী ফুলের চাষে সফল মোঃ ইফরান।

কটিয়াদী পৌর সদরের হালুয়াপাড়া মহল্লার মোঃ ইফরান তার নিজ চাষ দখলীয় এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। তিনি শখের বশে প্রথমবার সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে। হলুদ ফুল আর সবুজ গাছের অপরূপ দৃশ্য দেখলেই দুই চোখ জুড়িয়ে যায়।

কটিয়াদী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কটিয়াদী উপজেলার একটি পৌরসভা ও নয়টি ইউনিয়নে এক হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। এই উপজেলার ২৫ জন কৃষককে ১ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করার জন্য সূর্যমুখী বীজ সহায়তায় দেওয়া হয়। বিঘাপ্রতি সূর্যমুখী জমি থেকে প্রায় ৮-৯ মণ বীজ উৎপাদন হয়।

সূর্যমুখী বাজার মূল্য মণপ্রতি ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকা। সূর্যমুখী চাষ করার ১১০-১২৫ দিন সময়ের মধ্যে কৃষক তার কাঙ্খিত ফলন ঘরে তোলতে পারে। কৃষি বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সরকারের ফ্লাড রিকনস্ট্রাকশন ইমারজেন্সি এসিসট্যান্স প্রজেক্ট (ফ্লীপ) অর্থায়নে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে বিনামূল্য সরবরাহ করা হয় সার ও বীজ।

এছাড়া ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধী অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সূর্যমুখীর তেল অন্যান্য সাধারণ তেলের চেয়ে একটু আলাদা। কোলেস্টেরলমুক্ত প্রচুর পরিমাণে প্রাণশক্তি থাকায় সূর্যমুখী তেল শরীরের দুর্বলতা, কার্যক্ষমতা বাড়াতে সূর্যমুখীর ভূমিকা অনন্য। রান্নার জন্য সয়াবিন তেলের চেয়ে সূর্যমুখী তেল দশগুণ বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ।

সূর্যমুখী তেল হাড় সুস্থ ও মজবুত করে। শরীরের ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও কপারের চাহিদা পূরণ করে। ভিটামিন ‘ই’
সমৃদ্ধ এ তেল শরীরের নানা রকম ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে। সূর্যমুখী তেলে থাকা ম্যাগনেসিয়াম মানসিক চাপ দূর করে। এক কথায় সূর্যমুখী তেল মানব দেহের মহৌষধ হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। সূর্যমুখী ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পৌর সদরের হালুয়াপাড়া মহল্লার মো. ইফরানের চাষকৃত সূর্যমুখী ক্ষেতে সারি সারি গাছে ফুটে আছে শত শত সূর্যমুখী ফুল। প্রতিদিন হলুদ রঙের সূর্যমুখী দেখতে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।

স্থানীয় সংবাদ কর্মী ও টিকটক ক্রিয়েটরদের মাধ্যমে সূর্যমুখী ফুলের বাগানের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর, স্থানীয় দর্শনার্থী ও সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ দলবেঁধে স্বপরিবারে, ছেলে-মেয়ে, আত্নী-স্বজনও বন্ধুবান্ধব নিয়ে আসছেন সূর্যমুখী ফুলে দেখতে।

সূর্যমুখী ফুলের চাষি মোঃ ইফরান বলেন, কটিয়াদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও ব্লক সুপারভাইজারদের সুপরামর্শে গরুর খামারের পাশাপাশি ১ বিঘা জমিতে পরীক্ষা মূলকভাবে আরডিএস-২৭৪ জাতের সূর্যমুখী চাষ করেছি। ফলনও হয়েছে বেশ। প্রতিটি গাছে গাছে ফুল এসেছে। সরকারের ফ্লাড রিকনস্ট্রাকশন ইমারজেন্সী এসিসট্যান্স প্রজেক্ট (ফ্লীপ) সব ধরনের সহযোগিতা পেয়েছি।

আবহাওয়া ভাল থাকলে ফলন ভাল পাওয়ার আশার করছি। সূর্যমুখী বীজের কাঙ্খিত দাম পেলে ধান চাষের চেয়ে অন্তত তিন গুন বেশি লাভবান হব বলে মনে করি। একদিকে যেমন ফুলের সৌন্দর্য মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অন্যদিকে এ ফুলের বীজ বেঁচেও লাভবান হওয়া যায়। সে চিন্তা মাথায় রেখেই সূর্যমুখী ফুলে চাষ করেছি।

উপজেলার কটিয়াদী ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাইনুল ইসলাম বলেন, কটিয়াদী উপজেলা সূর্যমুখী ফুল চাষের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পোকামাকড় ও রোগবালাই আক্রমন হলে সাথে সাথে পরামর্শ দিচ্চি। আশা করা যাচ্ছে, আগামীতে পরিবেশ ও আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সূর্যমুখী ফুলের চাষ বৃদ্ধি পাবে।

কটিয়াদী উপজেলা কৃষি অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, এ বছর কটিয়াদী উপজেলাতে ১ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। আমরা আশা করি, আগামীতে সূর্যমুখীর আবাদ আরো বৃদ্ধি পাবে।

সূর্যমুখী ফুলের চাষকৃত জমির উর্বরতার বৃদ্ধি করে। এতে পোকামাকড় আক্রমণ করে কম। সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে কৃষকদের বিনামূল্যে সূর্যমুখী ফুলের বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। সূর্যমুখী ফুলের বীজ বিক্রির জন্যও কৃষকদেরকে আমরা প্রয়োজনীয় সহায়তা করব।