ঢাকা শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫

ঘিওরে ৮ লাখ টাকায় ‘ধর্ষণের’ ঘটনা ধামাচাপা!

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ১৫, ২০২৫, ০৪:৪২ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

মানিকগঞ্জের ঘিওরে ৮ লাখ টাকায় বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এক কিশোরীকে ‘ধর্ষণের’ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে থানার ওসি মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ৫ লাখ টাকা নিয়েছেন। আর ভুক্তভোগীর পরিবারকে ৩ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। 

এ ঘটনায় শিল্পী আক্তার নামে এক নারীকে আটক করেছে পুলিশ। তার দাবি, তিনি নিজেই ওই কিশোরীকে যৌন নিপীড়ন করেছেন। অন্যদিকে ভুক্তভোগীর পরিবারের দাবি, আটক নারীর সহযোগিতায় কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়েছে।

জানা যায়, চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি ঘিওর উপজেলার জাবরা গ্রামে এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কিশোরী ‘ধর্ষণের’ শিকার হয়। এ ঘটনায় ওই দিনই শিল্পী আক্তার নামে এক নারীকে আটক করে পুলিশ। আটক নারী ওই কিশোরীকে যৌন নিপীড়ন করেছেন বলে স্বীকার করেন। এরপর তার পরিবারের লোকজন ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার প্রস্তাব দেন।

এতে শিল্পী আক্তারকে ছাড়াতে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করেন ঘিওর থানার ওসি মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। দর কষাকষি শেষে জাবরা গ্রামের মুক্তার ভূঁইয়ার ছেলে রাকিব ভূঁইয়ার মাধ্যমে ওসিকে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দিলে পরদিন রাত ১০টার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

বিষয়টি নিয়ে ৬ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় প্রভাবশালীরা ভুক্তভোগীর বাড়িতে সালিশি মীমাংসা করে শিল্পী আক্তারকে ৩ লাখ টাকা জারিমানা করে। নিপীড়নের শিকার কিশোরীর মা-বাবা জানান,  মীমাংসাকারীদের মধ্যে ছিলেন স্থানীয় মাতবর ইলু খান, হাবিব ভূঁইয়া, মনি ভূঁইয়া, হাকিম, হাসিন, রউফ ও বাদী-বিবাদী দুই পরিবারের সদস্যরা।

ভুক্তভোগীর মা অভিযোগ করেন, শিল্পী আক্তারের সহযোগিতায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তি তার প্রতিবন্ধী মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। কিন্তু আটকের পর শিল্পী আক্তার দাবি করেন, অন্য কেউ নন, বরং তিনি নিজেই ওই প্রতিবন্ধীকে যৌন নিপীড়ন করেছেন। এর মাধ্যমে মূলত প্রকৃত আসামিকে আড়াল করার চেষ্টা করেন তিনি।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হুমায়ুন কবির বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর ওসির প্রথম দায়িত্ব আলমত সংগ্রহ করা, ভুক্তভোগীর মেডিকেল পরীক্ষা করানো এবং ২২ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া। তবে এ রকম ঘটনা সালিশে মীমাংসার কোন সুযোগ নেই।

সালিশ-মীমাংসার বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রাম্য মাতবর ইলু বলেন, মেয়েটাকে নিয়ে একটা ঝামেলা হয়েছিল। এক মাস আগে এলাকায় বসে ঘটনার মীমাংসা করা হয়েছে।

ঘিওর থানার ওসি মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ হয়েছিল। অভিযোগটি আমলযোগ্য মনে না হওয়ায় মামলা রজু করা হয়নি। পরবর্তীতে অভিযোগকারী অভিযোগ প্রত্যাহার করে স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করেছে।

মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মোছা. ইয়াসমিন খাতুনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে মেসেজ পাঠিয়েও কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।