দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গেল ৪ মাসে ১৮ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ১৭ নভেম্বর থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত ভারত থেকে এই চাল আমদানি করা হয়েছে।
দেশের চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনপ্রাপ্ত ৯২টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান শুল্কমুক্ত কোটায় এ চাল আমদানি করে। তবে ভারত থেকে চাল আমদানি অব্যাহত থাকলেও দেশের বাজারে দামের উপর কোন প্রভাব পড়ছে না।
গত বৃহষ্পতিবার (১৩ মার্চ) বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৩৫০ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। অর্থ্যাৎ এ নিয়ে গেল চার মাসে ১৮ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে এ বন্দর দিয়ে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. আরিফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত গত ৬ মার্চ এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বেসরকারিভাবে নন-বাসমতি সেদ্ধ চাল ও আতপ চাল আমদানির জন্য বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে এলসি খোলার সময়সীমা আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হলো।
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, দেশের চালের বাজার স্থিতিশীল ও ক্রেতা সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরকার দেশের শীর্ষ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাইরের দেশ থেকে চাল আমদানির অনুমতি দেয়। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে বাইরের দেশ থেকে চাল আমদানির এই সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা মাহাবুব আলম জানান, আটটি চাল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান গত ১৭ নভেম্বর থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত ১৮ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন চাল আমদানি করেছে। সারাদেশে চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল ৯২ প্রতিষ্ঠানকে। দুই লাখ ৭৩ হাজার মেট্রিক টন সেদ্ধ এবং এক লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল তাদের। অনেক প্রতিষ্ঠান এই সময়ের মধ্যে আমদানি করতে পারেনি। তারপরও সরকার ২৫ দিন সময় নির্ধারণ করে দেয় আমদানিকৃত চাল বাজারজাত করার জন্য। আশানুরূপ চাল আমদানি না হওয়ায় প্রথম দফায় ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়ায় সরকার। তারপরও আমদানি ধীরগতির কারণে আবারও সময় বাড়ায় সরকার। এভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল আমদানি না
হওয়ায় এবারও চতুর্থবারের মতো আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছে সরকার। এ সময়ের মধ্যে সব চাল আমদানি হলে বাজারে চালের দাম কমে আসবে বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে, চাল আমদানি অব্যহত থাকলেও বাজারে দামের ওপর এর কোন প্রভাব পড়ছে না। বরং লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে চালের দাম। রোজার শুরু থেকেই সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৪-৫ টাকা বেড়েছে। অব্যহতভাবে চালের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, চালের দাম কমানোর জন্য সরকারের নানামুখী উদ্যোগের পরও সুফল মিলছে না। ভারত থেকে চাল আমদানি হলেও দেশীয় চালের দামের ওপর তার কোন প্রভাব পড়ছে না। রোজার শুরুতেই সব ধরণের চালের দাম বেড়েছে। চালের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে সব চেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। রোজায় সবজিসহ অন্যান্য জিনিসপত্র কিনতে পারলেও চাল কিনতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
বেনাপোল বাজারের খুচরা চাল ব্যবসায়ী রাসেল মিয়া বলেন, রোজার শুরুতেই চালের দাম কেজিতে ৪-৫ টাকা বেড়েছে। রোজার আগের ৬৪ টাকা কেজি দরের ২৮ জাতের চাল বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬৮-৬৯ টাকা, ৭২ টাকার মিনিকেট ৭৬ টাকা, ৫২ টাকার মোটা চাল ৫৬ টাকা, ৮৪ টাকার বাশমতি চাল বিক্রি হচ্ছে ৮৮-৯০ টাকা কেজি। আমদানিকৃত ভারতীয় একটি চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা কেজি দরে। তবে বাজারে ক্রেতাদের মধ্যে ভারতীয় চালের চাহিদা কম।
তিনি বলেন, রোজার মধ্যে চালের দাম কমার তেমন কোন সম্ভাবনা নেই। ভারতীয় চাল আমদানি অবহ্যত থাকলেও বাজারে দামের উপর কোন প্রভাব পড়ছেনা। তবে সামনে নতুন চাল বাজারে উঠলে সরবরাহ বাড়লে দাম কমতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বেনাপোল স্থলবন্দর পরিচালক (ট্রাফিক) শামীম হোসেন জানান, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গত চার মাসে ভারত থেকে ১৮ হাজার ৮০০ মেট্রিকটন চাল আমদানি হয়েছে। চাল আমদানির জন্য সরকার আবারও একমাস সময় বৃদ্ধি করেছে। ভারত থেকে আসা আমদানিকৃত চালের ট্রাক স্থলবন্দর অভ্যন্তরে ঢুকলেই দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা তা দ্রুত ছাড়করণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন। যাতে আমদানিকৃত চাল দেশের বাজারে দ্রুত সরবরাহ হতে পারে।