নারায়ণগঞ্জে ৫৪ কোটি টাকা ব্যায়ে মদনপুর-মদনগঞ্জ সড়কটি সংস্কার করা হলেও ছয় মাসের মধ্যে তা নষ্ট হয়ে গেছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য ছোট, বড় গর্ত ।
এসব গর্তে আটকে প্রতিনিয়তই গাড়ি উল্টে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন এ সড়কে চলচলরত পরিবহনসহ যাত্রীরা। সড়কে পিচ উঠে গিয়ে যান চলাচলে মারাত্মক ভোগান্তির সৃষ্টি করছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ -এর মতে- অতিরিক্ত ওজনের পণ্যবোঝাই ট্রাক ও সিমেন্ট কারখানার যানবাহন চলাচলই ক্ষতির প্রধান কারণ। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও অনিয়মও সড়কের দ্রুত ক্ষতির কারণ।
স্থানীয়রা জানান, সড়কটি মূলত সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার জন্য উপযুক্ত ছিল। তবে, ২০২২ সালে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু চালুর পর এ সড়কের গুরুত্ব বেড়ে যায়। কারণ এটি পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের দূরত্ব প্রায় ৯ কিলোমিটার কমিয়ে দেয়।
শিল্পাঞ্চল ও বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করায় আঞ্চলিক এ মহাসড়কটি বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্যতম ব্যস্ততম সংযোগ সড়কে পরিণত হয়েছে।
সওজ’র কর্মকর্তারা জানান, তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু এ সড়কের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিলে সড়কটি প্রশস্ত ও মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১১ কিলোমিটারের সড়কে পিচ ঢালাই (মূলত ওভারলেপ), চারটি কালভার্ট ও একটি সেতু নির্মাণে সাড়ে ৫৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ২০২৩ সালের শেষদিকে সড়ক মেরামতের কাজ শেষ হয়।
সড়কটি প্রশস্ত ও সংস্কার করা হলেও অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই যান চলাচলের কারণে তা দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, সড়কটি মেরামতের পর ৬ মাসের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে ফাটল, গর্ত ও পিচ উঠে যাওয়ার ঘটনা ঘটতে থাকে। বর্তমানে সড়কটি যান চলাচলের জন্য একেবারেই অনুপযোগী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরীর দুই পাড়ে শাহ, প্রিমিয়ার, ক্রাউন, মেট্রোসেম, আকিজ, সেভেন রিংসসহ বড় সিমেন্ট কারখানাগুলোর অবস্থান। এসব সিমেন্ট কারখানার ভারী যানগুলো মোক্তারপুর-পঞ্চবটি সড়কের নির্মাণকাজ চলার কারণে বিকল্প হিসেবে মদনপুর-মদনগঞ্জ সড়ক ব্যবহার করছে। সিমেন্ট কারখানা ছাড়াও অন্য যানবাহনগুলোতে ওজনসীমার অতিরিক্ত পণ্য বহন করছে। অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালালেও পরিবহন শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে তা বন্ধ হয়ে যায়।
সওজ কর্মকর্তারা জানান, তারা পরিবহন মালিক ও সিমেন্ট কোম্পানিগুলোকে অতিরিক্ত পণ্য বহনে নিরুৎসাহিত করতে চিঠি দিয়েছেন, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। ৭ থেকে ৯ ডিসেম্বর পুলিশের সহযোগিতায় ওজনসীমার অতিরিক্ত পণ্যবাহী যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হলেও পরিবহন শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে অভিযান স্থগিত করা হয়।
এ সড়কে নিয়মিত সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যাত্রী পরিহন করেন বাচ্চু মিয়া। তিনি বলেন, ‘দিন-রাত প্রচুর ভারী ট্রাক ও লরি চলে, যারা দ্রুতগতিতে নিয়ম না মেনে চলে। এত ওজন সহ্য করতে না পেরে রাস্তা বসে যাচ্ছে। অনেক জায়গায় গর্ত হইছে। ফলে প্রায়ই গাড়ি উল্টে যাচ্ছে।’
সিমেন্ট কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা জানান, বিকল্প সড়ক না থাকায় তারা বাধ্য হয়েই মদনপুর-মদনগঞ্জ সড়ক ব্যবহার করছেন। শাহ সিমেন্টের একজন কর্মকর্তা বলেন, “পঞ্চবটি-মোক্তারপুর সড়কটির নির্মাণ শেষ হলে আমরা আর এই সড়ক ব্যবহার করবো না।
সওজ’র নারায়ণগঞ্জ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রহিম বলেন, ‘সড়কটির বেহাল দশা নিয়ে আমরাও চিন্তিত। ওভারলোডেড গাড়ি এই সড়কে চলাচলের কথা ছিল না। কিন্তু ওভারলোডেড যান চলাচল থামানোও যাচ্ছে না। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সংস্কারের চিন্তাও আমরা করছি। কিন্তু সড়কটির দুইপাশে নিচুজমি থাকায় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার প্রয়োজন।’
এদিকে, তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মাণের পর এ সড়কে যানবাহনের আধিক্য বেড়ে গেলে গত সরকারের আমলে সড়কটিকে ছয় লেনে রূপান্তরের পরিকল্পনাও হাতে নেওয়া হয়। তবে, ওই প্রকল্পের বিষয়ে নতুন কোনো অগ্রগতি নেই বলে জানান এ প্রকৌশলী।
আপনার মতামত লিখুন :