সঙ্গীর সন্ধানে খোন্দকার বাড়িতে কুমির!

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২৫, ১০:৫৮ এএম

সঙ্গীর সন্ধানে খোন্দকার বাড়িতে কুমির!

ছবি: সংগৃহীত

বাগেরহাটের ঐতিহাসিক খানজাহান আলী মাজার দিঘির মিঠা পানির কুমির বর্তমানে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। প্রায় ৬শ বছর ধরে এই দিঘিতে বংশ পরম্পরায় কুমির বাস করলেও বর্তমানে সঙ্গী খুঁজতে দিঘির একমাত্র কুমির লোকালয়ে চলে আসছে। এর ফলে দর্শনার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।

বাগেরহাটের হযরত খানজাহান আলী (র.) মাজার দিঘি প্রায় ২শ একর আয়তনের বিশাল জায়গা। হযরত খানজাহান আলী (রহ.) নিজেই দিঘিটি খনন করেছিলেন, যাতে কেউ দিঘির পানি নষ্ট না করতে পারে। তার পরিপ্রেক্ষিতে এক জোড়া মিঠা পানির কুমির দিঘিতে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেই থেকে বংশ পরম্পরায় এই কুমিরগুলি দিঘিতে বাস করে আসছিল।

তবে সম্প্রতি বয়স্কজনিত কারণে কালাপাহাড় ও ধলাপাহাড় নামে দুটি প্রাচীন কুমির মারা যায়। এরপর ২০০৫ সালে মাদ্রাজ থেকে ছয়টি কুমির আনা হয়, যার মধ্যে চারটি দিঘিতে ছাড়ার পর তিনটি অসাধু ব্যক্তিদের অত্যাচারের শিকার হয়ে মারা যায়। বর্তমানে একমাত্র কুমিরটি সঙ্গী না পাওয়ায় প্রায় ৯০ বার দিঘির আশপাশে লোকালয়ে চলে গেছে।

১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে কুমিরটি খোন্দকার বাড়ির পুকুরে চলে যায়। পরে খাদেমরা খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে দিঘিতে ফেরত পাঠান।

কুমির সাধারণত হিংস্র প্রাণী হলেও দিঘির কুমির ছিল শান্ত এবং দর্শনার্থীদের প্রতি সদয়। তারা কুমিরের গায়ে হাত বুলিয়ে, কখনো মুখে খাদ্যও ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। এই কারণে দেশ-বিদেশ থেকে অনেক দর্শনার্থী মাজার জিয়ারত শেষে দিঘির কুমির দেখতে আসতেন। কিন্তু বর্তমানে কুমিরের দেখা না পাওয়ায় দর্শনার্থীরা হতাশ।

রাজশাহী থেকে আসা মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, "আমরা পরিবার নিয়ে এসেছি মাজার জিয়ারত করেছি। দিঘির কুমির ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছা ছিল কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। ছোটবেলায় এসেছিলাম তখন কুমির দেখেছি। এখন সেটা না দেখে মন খারাপ লাগছে।"

খুলনা থেকে আসা শিক্ষার্থী সাদিয়া রহমান বলেন, "ছোটবেলা থেকে দিঘির কুমির দেখার গল্প শুনেছি, কিন্তু এখানে এসে কিছুই দেখতে পেলাম না। এটি দিঘির ঐতিহ্য। কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ দ্রুত সঙ্গীসহ নতুন কুমির দিঘিতে ছাড়ার ব্যবস্থা করা হোক।"

স্থানীয় বাসিন্দা রাশেদুল ইসলাম বলেন, "ছোটবেলা থেকে দেখেছি এখানে আসা মানুষ কুমির দেখার জন্য অধীর আগ্রহে থাকতো। এখন কুমিরের সংখ্যা কমে গেছে, এটা দুঃখজনক এবং দর্শনার্থীদের জন্য বিপজ্জনকও বটে। দ্রুত নতুন কুমির ছাড়ার প্রয়োজন।"

এ বিষয়ে মাজারের খাদেম ফকির জামাল হোসেন জানান, "বংশ পরম্পরায় এখানে কুমির ছিল, কিন্তু এখন কেবল একটিমাত্র কুমির দিঘিতে আছে। সঙ্গী না থাকায় সে লোকালয়ে চলে যাচ্ছে। দ্রুত নতুন কুমির ছাড়তে হবে না হলে আমাদের ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে, দর্শনার্থীরাও হতাশ হচ্ছেন।"

মাজার কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়রা দাবি করছেন, দ্রুত নতুন কুমির ছাড়া না হলে দিঘির ঐতিহ্য নষ্ট হয়ে যাবে এবং দর্শনার্থীদের আগ্রহ কমে যাবে।

আরবি/শিতি

Link copied!