ঢাকা সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫

যুবদল নেতার হুমকি

মিডিয়া কর্মীদের যেখানেই পাব সেখানেই পিটাব

নেত্রকোণা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২৫, ০১:০৭ পিএম
বহিষ্কৃত মোহনগঞ্জ পৌর যুবদলের সদস্য সচিব ফয়সাল আহমেদ খোকন। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

চাঁদা না পেয়ে ব্যবসায়ীর ওপর হামলার অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন মোহনগঞ্জ পৌর যুবদলের সদস্য সচিব ফয়সাল আহমেদ খোকন। এই বহিষ্কারসংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পর এবার সাংবাদিকদের পেটানোর হুমকি দিয়েছেন মোহনগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন জীবন।

শনিবার (১৫ মার্চ) সন্ধ্যায় মোহনগঞ্জ পৌর শহরের টেঙ্গাপাড়া রেলস্টেশন এলাকায় এক সমাবেশে তিনি এই হুমকি দেন। সমাবেশটি ফয়সাল আহমেদের বহিষ্কারের প্রতিবাদে আয়োজিত হয় এবং তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে তোফাজ্জল হোসেন জীবনকে বলতে শোনা যায়, “ফয়সাল আহমেদের অপরাধ হলো সে সত্য কথা বলে। এই যদি অপরাধ হয়, তাহলে আমার বহিষ্কার হলেও আপত্তি নেই। মিডিয়াকর্মীদের বলছি— এই অপপ্রচার বন্ধ করুন, নইলে যেখানেই পাব, সেখানেই পেটাব!”

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে চাঁদার টাকা না পেয়ে ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিনকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করার অভিযোগে যুবদল নেতা ফয়সাল আহমেদকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। শনিবার বিকেলে যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আবদুল মোনায়েম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বহিষ্কারের ঘোষণা দেন সহ-দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া।

এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি  কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ফয়সাল আহমেদকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার কোনো কর্মকাণ্ডের দায় দল নেবে না, এবং দলীয় নেতা-কর্মীদের তার সঙ্গে সম্পর্ক না রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, গত শুক্রবার বিকেলে মোহনগঞ্জ পৌর শহরের পাথরঘাটা এলাকায় ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিনের ওপর হামলা চালানো হয়। তিনি ঢাকার রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স আফিফ ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী।

জসিম উদ্দিনের স্ত্রী নিশা আক্তার জানান, তার স্বামী দীর্ঘদিন ঢাকায় বসবাস করেন। গত বছরের ৬ আগস্ট যুবদল নেতা ফয়সাল আহমেদ তার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় ফয়সাল ক্ষুব্ধ হন। গত বৃহস্পতিবার জসিম উদ্দিন ঢাকা থেকে নিজ এলাকায় আসেন। পরদিন ইফতারি কিনতে গেলে ফয়সাল ও তার সহযোগীরা অতর্কিত হামলা চালায়।

আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

মোহনগঞ্জ থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

যুবদলের সদস্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন জীবন বলেন, “আমি উপজেলা যুবদলের নেতা, এলাকায় কেউ ঝামেলা করলে আমরা তাকে পেটাবোই। সাংবাদিকরা মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করেছে, তাই এমন কথা বলেছি।”

তবে নেত্রকোনা জেলা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন খান রনি বলেন, “যারা সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় নেতারা কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এমন বক্তব্য সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত মতামত, দলের নয়। বিষয়টি কেন্দ্রকে জানানো হবে।”

এ বিষয়ে নেত্রকোনা জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন রিপন বলেন, “দলের কোনো নেতার এমন মন্তব্য করার সুযোগ নেই। বিষয়টি আমি শুনিনি, খোঁজ নিচ্ছি।”