ঢাকা সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫

‍‘মোর সব শেষ হই গেইজে, কিছু বাঁচাবা পারুনি‍‍’

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২৫, ০৫:৫৩ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

এক পা নেই, বৃদ্ধ হিসাব উদ্দীনের (৬০)। তারপরেও ২ হাজার  টাকা বেতনে একটি মিল চাতাল পাহাড়া দেয়। ছেলেকে নিয়ে অন্যের জমি বর্গায় চাষাবাদ করে সুখেই দিন যাচ্ছিল তার। কিন্তু আগুন তার তিলে তিলে গড়া সুখের সংসার ধ্বংস করে দিয়েছে। সবকিছু হারিয়ে দাঁড়াতে হয়েছে খোলা আকাশের নিচে।

কি করবেন তিনি, কিভাবে চলবে তার সংসার, আর কিভাবেই বা নতুন করে গড়ে তুলবেন মাথা গোঁজার ঠাই। এসব ভেবে তার স্ত্রী মাসুদা বেগম অজ্ঞান হয়ে ভর্তি হয়েছেন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

কিংকর্তব্যবিমুঢ় দুটো চোখে এখন শুধু হাত দিয়ে তীলে তীলে গড়া মাথা গোজার ঠাই ধ্বংস হওয়ার দৃশ্য দেখছেন তিনি। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের লালাপুর শুকানীপাড়া গ্রামে বাড়ী হিসাব উদ্দীনের।

সোমবার (১৭ মার্চ) সকালে আগুনে পুড়ে গেছে তার সবকিছু। সেই সাথে ওই অগ্নিকান্ডে ওই গ্রামের ৯টি পরিবারের আসবাবপত্র, ধান, ভুট্টা, চাল নগদ টাকাসহ প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বৃদ্ধ হিসাব উদ্দীন জানান, ‍‍`মোর সব শেষ হই গেইজে, কিছু বাঁচাবা পারুনি, মোর তো একখান পা নাই। মোর স্ত্রী আগিন দেখে অজ্ঞান, ওয়াক হাসপাতালত ভর্তি করিবা হইজে। রোজাডা কেংকরে খুলিম সানকে (সন্ধ্যায়), ওইডারও কোন বুদ্ধি নাই। রমজান মাস মি শেষ হই গেনু।

এসএসসি পরীক্ষার্থী রুপালী আক্তার জানান, আমার পড়ার বইটা পর্যন্ত বাঁচাতে পারিনি। সব পুড়ে গেছে। ঈদের পরে পরীক্ষা। বাবা দিনমজুর। বই কিনে দিবে, নাকি বাড়ী ঘর ঠিক করবে।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার শফিউল্লাহ বসুনিয়া জানান, রান্না ঘর থেকে আগুনের সুত্রপাত। প্রচণ্ড রোদ আর বাতাস থাকার কারণে দ্রুত ছড়িয়েছে আগুন। আমরা খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘন্টাব্যাপী চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। বাতাস না হলে আগুন এতদুর পর্যন্ত ছড়াতো না।

দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর-বাড়ী পরিদর্শন করেছেন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পলাশ কুমার দেবনাথ, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সামিয়েল মার্ডি ও জেলা জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা আব্দুল হাকিম।

ইউএনও পলাশ কুমার দেবনাথ জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলোকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাল, কম্বল ও নগদ টাকা প্রদান করা হয়েছে। জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। পরবর্তীতে আরও সহযোগিতা করা হবে।

এদিকে বড়বাড়ী ইউনিয়নের রুপগঞ্জে একই সময় আগুনে গমক্ষেত পুড়ে গেছে কয়েক জন কৃষকের। ক্ষতি এড়াতে আগুনে সতর্ক থাকার পরামর্শ উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের।