ঢাকা সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫

আলু নিয়ে কৃষকের চাপা কান্না

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২৫, ০৮:৩৩ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

বাজারে আলুর দাম না থাকায় এবং হিমাগার মালিকদের বুকিং বন্ধের কারণে চরম সংকটে পড়েছেন রংপুর অঞ্চলের কৃষকরা। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে মাঠের আলু অবিক্রীত থেকেই নষ্ট হবে কিংবা গবাদিপশুকে খাওয়াতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

রংপুর নগরীর চিলমন এলাকার কৃষক গৌরাঙ্গ রায় বলেন, চার দিন হলো আলু উত্তোলন করে জমিতে রেখেছি, কিন্তু ক্রেতা নেই, দামও নেই। বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি আলু ১০-১১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৩-১৪ টাকায়। অথচ এক দোন (২২ শতক) জমিতে আলু চাষে ৪০-৪২ হাজার টাকা খরচ হয়, যেখানে উৎপাদন হয় ২,০০০-২,২০০ কেজি। এতে প্রতি কেজির উৎপাদন খরচ পড়ে ১৯-২০ টাকা। হিমাগারে সংরক্ষণ করলে খরচ আরও ৮ টাকা বেড়ে যায়, ফলে মোট খরচ দাঁড়ায় ২৮ টাকা। কিন্তু বর্তমান বাজারদরে প্রতি কেজিতে ১৮-২০ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।

শুধু গৌরাঙ্গ রায় নন, এমন দুরবস্থার শিকার রংপুরের হাজারো কৃষক।

জানা গেছে, গত কয়েক বছরে আলুর ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা এবার বেশি জমিতে চাষ করেছেন। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় এবার আলুর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১,০১,৫৭৬ হেক্টর, তবে আবাদ হয়েছে ১,১৯,৭৩৯ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে গড়ে ২০ টনের বেশি উৎপাদন হলে মোট উৎপাদন দাঁড়াবে প্রায় ২৮ লাখ মেট্রিক টন।

গতকাল পর্যন্ত এ অঞ্চলের পাঁচ জেলায় প্রায় ৮৫ শতাংশ আলু উত্তোলন সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু হিমাগার মালিকরা বুকিং বন্ধ করে দেওয়ায় কৃষকরা চরম বিপাকে পড়েছেন। রংপুর জেলায় ৩৯টি হিমাগারে মোট ধারণক্ষমতা ৩,৬১,৪৩৮ মেট্রিক টন। তবে হিমাগার মালিকদের দাবি, সব বুকিং ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর ও কৃষক সংগঠনের আহ্বায়ক আহসানুল আরেফিন তিতু ও সাধারণ সম্পাদক অজিত দাস কোল্ড স্টোরে আলুর বুকিং বন্ধের তীব্র নিন্দা জানিয়ে সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে রংপুর জেলা হিমাগার মালিক সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বেশি আলু উৎপাদন হওয়ায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।

কৃষকরা বলছেন, দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে তারা বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়বেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকার যদি দ্রুত হিমাগার সংকটের সমাধান না করে এবং ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত না করে, তাহলে আগামী বছর কৃষকরা আলুর আবাদ কমিয়ে দিতে বাধ্য হবেন, যা সামগ্রিকভাবে দেশের খাদ্য নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।