‘জামাই মেলা’য় কি আসলেই জামাই পাওয়া যায়?

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ১৮, ২০২৫, ০৯:৫৫ এএম

‘জামাই মেলা’য় কি আসলেই জামাই পাওয়া যায়?

প্রতীকী ছবি

জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশেই গোপালপুর বাজারের আশপাশের বিশাল এলাকাজুড়ে বসে এক অনন্য মেলা। নাম ‘জামাই মেলা’। গোপালপুর-নরুন্দি সড়কের দুই পাশসহ পুরো মেলা চত্বরে বসেছে বিভিন্ন পণ্যের পসরা।

গত শনিবার (১৫মার্চ) থেকে শুরু হওয়া এই মেলা চলবে বুধবার পর্যন্ত। মেলা সাধারণত ১ থেকে ৫ চৈত্র (সনাতন পঞ্জিকা অনুসারে) অনুষ্ঠিত হয়। তবে এবার এটি রমজান মাসে আয়োজন করা হয়েছে। তারপরও স্থানীয়দের মধ্যে উৎসাহের কোনো অভাব নেই।

‘জামাই মেলা’ ঐতিহ্যগতভাবে জামাইদের শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে আসার উৎসবে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর গোপালপুর, নরুন্দি, ঘোড়াধাপ, ইটাইল, বাঁশচড়া, তুলসীরটর, লক্ষ্মীরচর, রানাগাছা, এবং ময়মনসিংহের চেচুয়া এলাকার লাখো মানুষ মেলায় অংশগ্রহণ করে। এই মেলা জামাইদের জন্য বিশেষ এক মিলনমেলায় পরিণত হয়। যেখানে তারা বিভিন্ন ধরনের উপহার নিয়ে শ্বশুরবাড়ি যান। মেলায় মিষ্টি, খেলনা, প্রসাধনী, ফার্নিচারসহ নানা ধরনের পণ্যের পসরা সাজানো থাকে। শিশুরা উপভোগ করতে পারে নাগরদোলা, চরকি, দোলনা, এবং নানা রকম বিনোদন।

গোপালপুর বাজারের বিশাল বটগাছের নিচে প্রথম মেলা শুরু হয়েছিল। তখন এটি বারুণী স্নান উপলক্ষে আয়োজন করা হতো। ব্রিটিশ আমলে এই মেলার সূচনা হলেও বর্তমানে এটি জামাই মেলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। গোপালপুর ও আশপাশের এলাকাবাসী মেলাকে ঈদ বা পূজা-পার্বণের মতোই একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হিসেবে পালন করে।

মেলাকে কেন্দ্র করে শ্বশুর-শাশুড়িরা তাদের জামাইদের বরণ করে নিতে প্রস্তুতি নেন। জামাইরা মেলায় গিয়ে শ্বশুরবাড়ির জন্য বিভিন্ন উপহার কিনে নিয়ে আসেন যেমন চিড়া, মুড়ি, মিষ্টি, জিলাপি, মাছ ইত্যাদি। গোপালপুরের আড়িলিয়া গ্রামের নরুল ইসলাম বলেন, ‘মেলা উপলক্ষে বাড়িতে নানা ধরনের খাবারের আয়োজন করা হয়, জামাইদের দেয়া টাকায় তারা এসব কিনে আনেন।’

মেলা বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়ীকে একটি ভালো বাজার সুবিধা প্রদান করে। ময়মনসিংহ থেকে আচার বিক্রেতা মোশারফ হোসেন বলেন, ‘এই মেলা আমাকে স্থানীয়দের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। বিক্রি কিছুটা কম হলেও সারা বছর এই ব্যবসার মাধ্যমেই তিনি ভালো সম্পর্ক তৈরি করেছেন।’

মেলার আয়োজক কমিটির সদস্য মো. গোলাম রব্বানী জানিয়েছেন, মেলা খুব ভালোভাবে চলেছে এবং তারা আশা করছেন এটি সুন্দরভাবে শেষ হবে। বিশেষ করে রমজান মাসে ইফতারের পর মেলায় মানুষের ঢল নামে, যা মেলার প্রাণবন্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে।

এটি শুধুমাত্র একটি মেলা নয় বরং একটি ঐতিহ্য, একটি উৎসব, যেখানে পরিবার, বন্ধুবান্ধব, এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে মিলিত হয়ে আনন্দ উদযাপন করা হয়। জামাই মেলা যেন একধরনের পারিবারিক বন্ধনকে আরো শক্তিশালী করে তোলে।
 

আরবি/শিতি

Link copied!