ছেলে পুত্রবধূদের পিটুনিতে কালো হয়েছে বৃদ্ধা মায়ের শরীর!

কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: মার্চ ১৮, ২০২৫, ০৩:২৯ পিএম

ছেলে পুত্রবধূদের পিটুনিতে কালো হয়েছে বৃদ্ধা মায়ের শরীর!

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় পুত্রবধূ ও ছেলেদের পিটুনিতে কালো সামা দাগ পড়েছে বৃদ্ধা মায়ের শরীরে। অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বৃদ্ধা মমেনা খাতুন(৬৬)।

বৃদ্ধা মমেনা খাতুন উপজেলার ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানটারী এলাকার সুলতান মিয়ার স্ত্রী।

থানায় দায়ের করা অভিযোগে প্রকাশ, বৃদ্ধা মমেনা বেগমের ৩ ছেলের সবাই পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত জমি বন্টক করে নিয়েছেন। বন্টক সূত্রে বৃদ্ধা মা মমেনা খাতুন ৯ শতাংশ জমির মালিকানা পান। সেই জমি চাষাবাদ করে মায়ের ভরনপোষন দিতেন ছোট ছেলে আমিনুল ইসলাম। সাম্প্রতিক সময় ছোট ছেলেকে গাছের সাথে বেঁধে অমানসিক নির্যাতন করে সেই জমির তামাকখেত কেটে নিয়ে যান বড় ছেলে মিজানুর রহমান। এ ঘটনায় ছোট ছেলে থানায় মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় স্বাক্ষী করা হয় বৃদ্ধা মাকে।

বৃদ্ধা মা ছোট ছেলেকে গাছে বেঁধে অমানসিক নির্যাতনের বর্ণনা পুলিশের সামনে তুলে ধরেন। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে গত ৭ মার্চ বিকেলে বড় ছেলে, তার স্ত্রী পমিনা বেগম ও মেঝ ছেলে মমিনুল ইসলাম সকলে মিলে রোজাদার বৃদ্ধা মাকে কাঠের লাঠি দিয়ে বেধম মারপিট করেন। এতে বৃদ্ধা হাত ও কোমড়ের নিচে বাহুতে প্রচন্ড আঘাত পেয়ে আহত হন। যে আঘাত দীর্ঘ ১০ দিন পরেও কালোর স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে বৃদ্ধার শরীরে।

স্থানীয়রা বৃদ্ধা মমেনা খাতুনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে ৫ দিন চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেন তিনি। এরপর হামলাকারী দুই ছেলে ও পুত্রবধুদের বিরুদ্ধে আদিতমারী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বৃদ্ধা মমেনা খাতুন। পুলিশ তদন্ত করে আসলেও আইনগত কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় পুনরায় তাকে মারপিটসহ বাড়ি ছাড়া করার হুমকী দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিন।

থানায় অভিযোগের পরেও অব্যাহত হুমকীতে নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছেন এই বৃদ্ধা। ন্যায় বিচার পেতে প্রায় দিন আদিতমারী থানায় এসে নিস্ফল ঘুরে ফিরে যাচ্ছেন তিনি। কোথায় গেলে পুত্রবধু ও সন্তানদের বিচার হবে? কে শুনবে অসহায় গরিবের বৃদ্ধার কথা? এ প্রতিবেদকের কাছে বারবার এমন প্রশ্ন বৃদ্ধা মমেনা খাতুনের।

হাতের বাহুতে সন্তানদের দেয়া আঘাতের চিহ্নগুলো দেখিয়ে বৃদ্ধা মমেনা খাতুন বলেন, কোমড়ের নিচে পুরোটা কালো দাগ হয়ে রয়েছে বাবা। বাহিরের দাগগুলো দেখো আজও শুকায়নি(মিশে যায়নি)।  নিজে না খেয়ে সন্তানদের খাইয়েছি। সেই ছেলেরা আজ বউয়ের কথায় আমাকে এভাবে মারপিট করেছে। সেদিনের কথা মনে হলে এখনও বুকটা কাঁপে। অভিযোগ দিয়েছি জন্য ছোট ছেলেকে সহ বাড়ি ছাড়া করার হুমকী দিচ্ছে। পুলিশ তদন্ত করে আর কিছুই করছে না। যে সন্তানকে পেটে বুকে আগলে রাখতে নিজের শরীরের রক্ত পানি করেছি। সেই সন্তানের ভয়ে আজ বাড়িতেও থাকতে ভয় পাচ্ছি না। বিচারও তো পাচ্ছি না। কোথায় গেলে বিচার পাবো বাপু?  

অভিযুক্ত বড় ছেলে মিজানুর রহমান বলেন, আমি না, আমার স্ত্রী মাকে মারপিট করেছে। শ্বাশুড়ি- বউয়ে ঝগড়ায় এমন হয়েছে। মায়ের মুখের ভাষা ভাল না, তাই বউ পিটুনি দিয়েছে। মা যেহেতু থানায় অভিযোগ দিয়েছে। তাই মায়ের এখন আর খোঁজ খবর নিচ্ছি না।

আদিতমারী থানা ওসি আলী আকবর বলেন, অভিযোগটি তদন্তে অফিসার পাঠানো হয়েছিল। আপডেট  খবর নিতে পারিনি। খোঁজ খবর নিয়ে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরবি/জেডি

Link copied!