ঋণের কিস্তি আদায় শেষে ফেরছিলেন দুই এনজিও কর্মী। কিন্তু পথে বাধাপ্রাপ্ত হোন। কয়েকজন তাদের তুলে নিয়ে যায়। পুরুষ কর্মীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। আর নারী কর্মীকে নগ্ন করে ভিডিও করা হয়। এরপর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মুক্তিপণ আদায় করা হয়।
কুমিল্লার চান্দিনা পৌসভার তুলাতলী দক্ষিণপাড়া দিঘির পাড়ের একটি বাগানে সোমবার (১৭ মার্চ) সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত এই ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এলাকার চার বখাটে তাদের দুজনকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। নির্যাতনের পর নগ্ন করা ওই ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে নারীর বোনের কাছ থেকে বিকাশে টাকা আদায় করা হয়।
পরে স্থানীয় লোকজন টের পেয়ে বখাটেদের ধাওয়া দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ওই দুজনকে উদ্ধার করে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) দুপুরে ভুক্তভোগী পুরুষ কর্মী বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেছেন।
আসামিদের বাড়ি তুলাতলীসহ আশপাশের এলাকায়। তবে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে আসামিদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হয়নি।
চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘নির্যাতিত পুরুষ কর্মী অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় ও চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলাটি করেছেন। আসামিরা পলাতক। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, সোমবার ইফতারের পর তারা দুজন উপজেলার তুলাতলী গ্রামে ঋণের কিস্তি আদায় করতে যান। সেখান থেকে বের হতেই চার বখাটে যুবক তাদের আটক করে তুলাতলী গ্রামের শেষে এতবারপুর গ্রামের মালিবাড়ি–সংলগ্ন একটি মৎস্য খামারের পাড়ে নিয়ে যান।
প্রথমে তাদের আদায় করা কিস্তির টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এমন সময় স্থানীয় রুহুল আমিন নামে এক ব্যক্তি তাদের দেখে ফেলেন। তখন সেখান থেকে তাদের তুলাতলী দক্ষিণপাড়া দিঘির পাড়ে নির্জন বাগানে নিয়ে আটকে রাখা হয়।
এ সময় পুরুষ কর্মীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে বিদ্যুতের শক দেওয়া হয় আর নারী কর্মীর হাত-পা ও মুখ বেঁধে নগ্ন করে মুঠোফোনে ভিডিও করা হয়। ওই ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আবার চাঁদা দাবি করা হয়।
পরে ওই নারী কর্মী তার বোনকে মুঠোফোনে কল করে বখাটেদের বিকাশ নম্বরে ২০ হাজার টাকা পাঠাতে বলেন। ওই টাকা পাওয়ার পরও তাদের নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে গ্রামের লোকজন টের পেয়ে ডাকাত বলে ধাওয়া করলে বখাটেরা পালিয়ে যান।
মামলার বাদী বলেন, ‘আমাকে এত নির্যাতন করা হয়েছে যে আমি চিৎকার করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমার সহকর্মীর মুখ বেঁধে রাখায় সে–ও চিৎকার করতে পারেননি। একপর্যায়ে মুখের বাঁধন খুলে গেলে আমার সহকর্মী জোরে জোরে চিৎকার করেন। তখন গ্রামবাসী এসে আমাদের উদ্ধার করেন।’
ভুক্তভোগীদের বর্ণনায়—নগ্ন করে নির্যাতনের কথা বলা হলেও মামলার এজাহারে তা উল্লেখ করা হয়নি।
ওসি নাজমুল হুদা বলেন, ‘মামলার বাদী সাংবাদিকদের কাছে নারী কর্মীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের কথা বলেছেন। তবে এজাহারে বাদী সেটি উল্লেখ করেননি। তবে আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছি।’