মাদারীপুরের ডাসারে জসিম বেপারী নামে এক শিক্ষককে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এতে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে নাগরিক সমাজে।
গত বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) রাতে ভাড়া বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিষয়টি বুধবার প্রকাশ হওয়ার পর ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে নাগরিক সমাজে।
মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পূর্ব কমলাপুর গ্রামের ছোমেদ বেপারীর ছেলে জসিম বেপারী। তিনি সৈয়দ আতাহার আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
জানা গেছে, মোবাইল ফোনের গ্যালারিতে নতুন উপদেষ্টা নিয়োগ সংক্রান্ত একটি গেজেটের ভুয়া কপি পাওয়ায় তাকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। জসিম বেপারী বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি। দীর্ঘদিন ধরে তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গ্রেড উন্নতিকরণ নিয়ে আন্দোলন করে আসছিলেন। সে কারণে তাকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি পরিবারের।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, শিক্ষক জসিম বাসায় বসে সরকারের সংহতি, জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার জন্য জনসাধারণের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। এমন সংবাদের ভিত্তিতে উত্তর ডাসারের সৈয়দ নাসিরের বসত বাড়িতে ভাড়া থাকা শিক্ষক জসিমকে আটক করা হয়। এরপরে তার কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার মোবাইল ফোনের গ্যালারিতে নতুন উপদেষ্টা নিয়োগ সংক্রান্ত একটি ভুয়া গেজেটের কপি পাওয়া যায়।
পরে ডাসার থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে থানায় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১৪ মার্চ আদালতে তোলা হয়। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করে।
অভিযুক্ত শিক্ষকের বড় ভাই ইলিয়াস বেপারী বলেন, আমার ভাইকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে।
দবির হোসেন নামে এক শিক্ষক বলেন, শিক্ষক জসিম বেপারী গ্রেড সংশোধন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করে আসছিলেন। তিনি রাষ্ট্রদ্রোহ কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন। তাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মামলায় জড়ানো হয়েছে। আমরা তার দ্রুত মুক্তি চাই।
মাদারীপুর জজ কোর্টের আইনজীবী আবুল হাসান সোহেল বলেন, কার মোবাইলে কী থাকবে সেটা খুঁজে খুঁজে দেখা পুলিশের কাজ নয়। একজন শিক্ষককে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার করা দুঃখজনক।
মাদারীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, সহকারী শিক্ষক জসিম বেপারীকে মামলার কারণে ১৬ মার্চ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
ডাসার থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ এহতেশামুল ইসলাম বলেন, শিক্ষককে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
এ বিষয়ে মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন।