ড্যান্সার তামান্না যেভাবে হয়ে উঠলেন ‘লেডি ডন’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: মার্চ ১৯, ২০২৫, ০৫:০৫ পিএম

ড্যান্সার তামান্না যেভাবে হয়ে উঠলেন ‘লেডি ডন’

ছবি: সংগৃহীত

তামান্না শারমিন চট্টগ্রামের কুখ্যাত সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী। পেশাগত জীবনে তিনি একজন নৃত্যশিল্পী হিসেবে পরিচিত। চট্টগ্রাম নগরীর এমইএস কলেজে শিক্ষাগ্রহণের সময় তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

দুবাইয়ের বিভিন্ন নাইট ক্লাবে কাজ করার সময় তামান্নার পরিচয় হয় সাজ্জাদের সঙ্গে। তাদের সম্পর্ক মোবাইল নম্বর আদান-প্রদানের মাধ্যমে শুরু হয় এবং ২০২৪ সালের প্রথম দিকে রাউজানের একটি মসজিদে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এটি ছিল তামান্নার তৃতীয় ও সাজ্জাদের দ্বিতীয় বিয়ে। বর্তমানে তামান্নার আগের সংসারের একটি সন্তান রয়েছে।

সাজ্জাদকে বিয়ের পর তামান্নার জীবন পুরোপুরি বদলে যায়। তিনি কেবল সাজ্জাদের স্ত্রীই হননি, বরং তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তামান্নার বিরুদ্ধে একাধিক যুবকের সঙ্গে বিয়ের নামে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। তিনি বিয়ের পর স্বামীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যেতেন। সাজ্জাদও তেমনই একজন ছিলেন।

স্থানীয়ভাবে তামান্না ‍‍`লেডি ডন‍‍` হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার ছেলের মোটরসাইকেল চালানোর ধরন ও কথাবার্তায় কঠোরতার জন্য তিনি এই উপাধি পান।

অন্যদিকে, ছোটবেলায় অসহায় অবস্থায় বেড়ে ওঠা সাজ্জাদ তার মায়ের মৃত্যুর পর নজু মিয়ারহাট এলাকায় একটি মুরগির দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। সেখান থেকেই তিনি অপরাধ জগতে প্রবেশ করেন এবং দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী খানের অনুসারী হয়ে ওঠেন। জমি বিক্রি, নতুন বাড়ি নির্মাণে চাঁদাবাজি, মারামারির মতো অপরাধে জড়িয়ে তিনি কুখ্যাত হয়ে ওঠেন।

২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় সাজ্জাদ প্রকাশ্যে দুই ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করেন। এরপর তিনি পালিয়ে গিয়ে রাউজান এলাকায় আশ্রয় নেন। সাজ্জাদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাকে জামিনে ছাড়িয়ে আনতে তামান্না বিভিন্ন ভয়ঙ্কর হুমকি দেন এবং ফেসবুক লাইভে এসে আইনকে চ্যালেঞ্জ করেন। তিনি প্রকাশ্যে বলেন, ‘আমরা কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দিয়ে সাজ্জাদকে জামিন করাব।’

তামান্নার এসব কর্মকাণ্ড তাকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে। তিনি লাইভে স্বীকার করেন যে, তার স্বামী সাজ্জাদ একজন সন্ত্রাসী। এছাড়া, যারা সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করতে সহায়তা করেছে, তাদের দেখে নেওয়ার হুমকিও দেন তিনি।

১২ ডিসেম্বর পুলিশ সাজ্জাদকে ধরতে গিয়ে তামান্নাকেও গ্রেপ্তার করে। পরে ৬ জানুয়ারি তিনি জামিনে মুক্তি পান। জামিন পাওয়ার পর তিনি বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফুর রহমানসহ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, তার স্বামীকে না পেয়ে ওসি তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন, যার ফলে তার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়।

৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ সাজ্জাদের গ্রেপ্তারে পুরস্কার ঘোষণা করেন। তার আগের দিন সাজ্জাদ ফেসবুক লাইভে এসে ওসি আরিফুর রহমানকে প্রকাশ্যে হুমকি দেন।

পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারের পর সাজ্জাদকে চান্দগাঁও থানার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ড আবেদন করা হলে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। বর্তমানে সিএমপির মুনসুরাবাদ ডিবি কার্যালয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ জানান, এখনো সাজ্জাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী তামান্নাকেও শিগগিরই পুনরায় গ্রেপ্তার করা হবে।

আরবি/একে

Link copied!