চাঁদাবাজির মামলা নিচ্ছিল পুলিশ। আর তাতে দলবল নিয়ে থানায় গিয়ে হামলা করল বিএনপি নেতা। এতে আহত হলেন থানার একজন কনস্টেবলও।
এমন অভিযোগই উঠল জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী আশিক পার্থের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি গত মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায় সাত বছর আগে বগুড়ার শাহজাহানপুর এলাকার তোফাজ্জল হোসেন ক্ষেতলালের মিজানুর রহমানের কাছে জমি কিনেন। ওই জমি গত মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ক্ষেতলাল সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে দলিল সম্পাদন করতে আসেন।
এ সময় উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী আশিক পার্থসহ বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মী সেখানে গিয়ে জমির ক্রেতার কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু জমির ক্রেতা তাদের চাঁদা দিতে অপারগতা জানান।
তখন উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী আশিক পার্থ ও তার লোকজন দলিল সম্পাদন করতে দেবেন না বলে তাদের জানিয়ে দেন। এ নিয়ে তোফাজ্জল ও তার স্বজনদের সঙ্গে বিএনপির নেতাদের বাগবিতণ্ডা হয়।
একপর্যায়ে বিএনপি নেতা মেহেদী আশিক ও তার লোকজন তোফাজ্জলের আত্মীয়দের বেধড়ক মারপিট করে জখম করেন। খবর পেয়ে থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়।
পুলিশ গুরুতর আহত তোফাজ্জলকে সেখান থেকে উদ্ধার করে ক্ষেতলাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। এ ঘটনায় তোফাজ্জলের স্ত্রী জয়নব বেগম থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা করতে যান।
খবর পেয়ে ইফতারের আগমুহূর্তে বিএনপি নেতা মেহেদী আশিক পার্থ দলবল নিয়ে থানায় হামলা করেন। এ সময় বাধা দিতে গিয়ে থানার কনস্টেবল কাজী জাফর আহত হন।
ঘটনার পর সেনাবাহিনী, পুলিশ সুপার মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত ফোর্স, জেলা গোয়েন্দা শাখা ও কালাই থানা পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য থানায় অবস্থান নেন। সেখানে লাঠিপেটা করে লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ঘটনাস্থল থেকে তিনজন ও পরে আরও দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। থানায় হামলা ও পুলিশকে আহত করার অভিযোগে একটি এবং অন্যটি চাঁদাবাজির মামলা। ঘটনার পর পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব জানিয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- দেলোয়ার হোসেন ওরফে বাবু (৪৭), বিপ্লব হোসেন (২৪), ফারুক হোসেন (৩২), উজ্জ্বল (৩৪) ও সজীব (২৮)। আর আহতরা হলেন- তোফাজ্জল হোসেন (৩৫), আমিরুল ইসলাম (২৭), রফিক (৩৭), আব্দুল মমিন (৩৮) ও ক্ষেতলাল থানার পুলিশ কনস্টেবল কাজী জাফর (২৮)।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী আশিক পার্থের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। ক্ষেতলাল উপজেলা বিএনপির সভাপতি খালেদুল মাসুদ আঞ্জুমান বলেন, ‘এখন বলার কিছু নেই। তবে তদন্ত করলে সঠিক ঘটনা বেরিয়ে আসবে।’
ক্ষেতলাল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় দুটি মামলা হয়েছে। এ মামলায় পাঁচজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলছে।’