লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের তিস্তার চরাঞ্চলে এ বছর ব্যাপক ভুট্টার আবাদ হয়েছে। এ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩ টি ইউনিয়নের কিছু অংশ তিস্তা নদী বিধ্বস্ত। এই ৩ ইউনিয়নের চাষিরা ঘুরে দাঁড়াতে একমাত্র অবলম্বন নদীতে জেগে ওঠা বালুচরে ভুট্টার আবাদ করেছেন।
সরেজমিনে উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের চর রুদ্রেশ্বর, ভোটমারী ইউনিয়নের শৈলমারী ও তুষভান্ডার ইউনিয়নের মুন্সির বাজার চর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এ বছর বন্যার কারণে বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হলেও ভুট্টা চাষের মাধ্যমে সে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন চরাঞ্চলের কৃষকেরা। বন্যার পানিতে পলি জমে চরাঞ্চলের জমি বেশি উর্বর হওয়ায় ভুট্টার ফলন ভালো হয় বলে জানান চাষিরা। ভুট্টাকে ঘিরে নদী গর্ভে নিঃস্ব হওয়া মানুষের মুখে এখন সুখের হাসি।
উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়ন শৌলমারী এলাকার ভুট্টাচাষি আব্দুল খালেক জানান, এবারে তিনি প্রায় ৩ একর জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন। এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। ভুট্টা উঠানো পর্যন্ত আরও খরচ হবে ৫০ হাজার টাকা। ভুট্টার ফলন যেভাবে হয়েছে তাতে তিনি প্রায় ২৫০ থেকে ৩ শ মণ ভুট্টার আশা করছেন।
বাজার ভালো থাকলে লক্ষাধিক টাকা লাভের আশা করছেন এ চাষি। তবে তিনি অভিযোগ করে বলেন, বীজ, সার ও কীটনাশকসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম হাতের লাগালে থাকলে দ্বিগুণ লাভ হতো।
চর ভোটমারী এলাকার ভূট্টা চাষি সরিফুল ইসলাম ৩ একর জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, ভুট্টা চাষ করে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার স্বপ্ন দেখছেন। ভুট্টার বাজারদর ভালো থাকলে অনেক লাভবানের আশা করছেন এ চাষি।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (ভোটমারী ব্লক) মোহাম্মদ ফরিদ বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে চরাঞ্চলের ভুট্টা চাষিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এবার ভোটমারী ইউনিয়নে ১৯৭০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগ প্রণোদনার ভুট্টার বীজ ও সার দিয়ে কৃষকদের সহায়তা করছে এবং পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তুষার কান্তি রায় বলেন, এ বছর কালীগঞ্জ উপজেলায় ৪১৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। লাভজনক ফসল হওয়ায় চরাঞ্চলে ভুট্টার আবাদ বেশি হচ্ছে। কৃষকরা অধিক লাভ করতে পারে, সে বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ভুট্টা চাষে চরের মানুষের জীবনমান বদলে গেছে। অনেকের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। আবহাওয়া অনূকূলে থাকলে ও কৃষকরা এর সঠিক দাম পেলে চরের অর্থনীতি আরও সচল হবে।