পিয়নের হাতেই চলছে মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়!

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৫, ০৮:৫০ এএম

পিয়নের হাতেই চলছে মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়!

ছবি: সংগৃহীত

যশোরের মনিরামপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় চরম জনবল সংকটে ভুগছে। বর্তমানে এই দপ্তরে একজন অফিস সহায়ক (পিয়ন) ছাড়া আর কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী নেই। ফলে দাপ্তরিক কাজকর্ম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, সেবা নিতে আসা মানুষও পড়ছেন ভোগান্তিতে।

পিয়ন এসে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দপ্তর খুলে বসে থাকেন। কোনো কর্মকর্তা না থাকায় সরকারের এ দপ্তরে কোনো সেবা পাচ্ছেন না মাছচাষিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা মৎস্য দপ্তরে জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা, সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা, ক্ষেত্র সহকারী, অফিস সহকারী ও অফিস সহায়কের পাঁচটি পদ রয়েছে।

দায়িত্বে থাকা জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাইদুর রহমান রেজা এক মাস আগে বদলি হয়ে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় যোগদান করেছেন। এরপর নতুন কাউকে এখানে পদায়ন করা হয়নি। পাশের অভয়নগর উপজেলার জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল হককে মনিরামপুরে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বিশেষ কাজ ছাড়া তিনি মনিরামপুরে আসেন না। এই দপ্তরে সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা ও ক্ষেত্র সহকারীর পদ খালি রয়েছে প্রায় দুই বছর। আর অফিস সহকারী নেই ৮-৯ মাস।

উপজেলা মৎস্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৪৪৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বৃহত্তর এই উপজেলায় ১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় তিনটি নদ ও পাঁচটি বাঁওড় রয়েছে।

২৫টি খাল-বিলের পাশাপাশি এখানে ১১ হাজার ৬৪৩টি পুকুর ও ৪ হাজার ৮১০টি মাছের ঘের রয়েছে। যেখানে পাঙাশ, পাবদা, শিং, বিভিন্ন কার্পজাতীয় মাছের পাশাপাশি ২ হাজার ৫৮৫ ঘেরে গলদা ও ৭৫টি ঘেরে বাগদা চিংড়ির চাষ করা হচ্ছে। উপজেলার প্রায় ২৫ হাজার মৎস্যচাষি বছরে ৪৮ হাজার ৯৩ টন মাছ উৎপাদন করেন, যা স্থানীয় চাহিদার তুলনায় ৩৬ হাজার টন বেশি।

জানা গেছে, জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা না থাকায় মাছচাষিরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ পাচ্ছেন না। সেবা নিতে দপ্তরে এসে তাদের ফিরে যেতে হচ্ছে। বিভিন্ন সময় নানা কারণে ঘেরে মাছ মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে। তখন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ঘের পরিদর্শন করে চাষিদের কার্যকর পরামর্শ দেন, যা ক্ষতির হাত থেকে চাষিদের রক্ষা করে।

নদী বা খালে বিভিন্ন সময় স্থানীয় প্রভাবশালীরা পাটা দিয়ে মাছ আটকে রেখে সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করেন। বাজারে মেয়াদোত্তীর্ণ মাছের খাদ্য বিক্রি হয়। অনেক ব্যবসায়ী দপ্তরের নিবন্ধন না নিয়ে মাছের খাদ্য বিক্রি করেন।

মাছের ঘেরে মুরগির নিষিদ্ধ বিষ্ঠা ছড়ানো হয়। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসব বিষয় উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অপরাধীদের নিবৃত্ত করে থাকেন। মনিরামপুরে মৎস্য কর্মকর্তার পদ শূন্য থাকায় এসব কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে।

অফিস সহায়ক নূরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ছাড়া দপ্তরে রাজস্ব খাতের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী এখানে কর্মরত নেই। একটি প্রকল্পে মেরিন ফিশারিজ কর্মকর্তা পদে তহমিনা সিদ্দিকা ও আল-আমিন নামে তাঁর একজন সহকারী আছেন। তাদের প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের নভেম্বর মাসে শেষ হবে।’

নূরুল ইসলাম বলেন, ‘অভয়নগর উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তাকে এখানে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বিশেষ কাজ ছাড়া আসেন না। আমি সকালে এসে দপ্তর খুলে বসে থাকি।

আর সময় শেষে বন্ধ করি। মাছচাষিরা সেবা নিতে এলে বলি, দপ্তরে পরামর্শ দেওয়ারও মতো কেউ নেই। অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মৎস্য কর্মকর্তার মোবাইল নম্বর দিয়ে তার সঙ্গে মাছচাষিদের যোগাযোগ করতে বলি।’

নূরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘রেজা স্যার যখন ছিলেন তখন আমি ছাড়া অন্য তিন পদও খালি ছিল। স্যারকে একা বাইরের কাজের পাশাপাশি অফিসের অন্য সব কাজ সামলাতে হতো।’

উপজেলার ভরতপুর গ্রামের মাছচাষি আখতারুজ্জামান সোহাগ বলেন, ‘আমার পাঁচ বিঘা ঘেরে গলদা, পাবদা ও সাদা মাছের চাষ আছে। উপজেলা মৎস্য দপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শে চাষ করছি।

মনিরামপুরে বর্তমানে এই পদে কোনো কর্মকর্তার নিয়োগ নেই। অতিরিক্ত দায়িত্বে যিনি আছেন, মোবাইলে তার পরামর্শ নিই। কিন্তু জরুরি মুহূর্তে কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা মৎস্য কর্মকর্তার অভাব বোধ করছি।’

মনিরামপুরে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল হক বলেন, ‘আমার মূল দায়িত্ব অভয়নগরে। বিশেষ কাজ থাকলে মনিরামপুরে যাই। মাছচাষিরা মোবাইলে যোগাযোগ করে পরামর্শ নেন।’

যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সরকার মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মনিরামপুরে লোকবল সংকটের কথা আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। দ্রুত সংকটের সমাধান হবে বলে আশা করছি।’

আরবি/জেডআর

Link copied!