মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ভেঙে পড়েছে স্থানীয় সরকারের চারটি ইউনিয়ন পরিষদের সার্বিক কার্যক্রম। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে ওই চারটি ইউনিয়নে বিভিন্ন মামলার আসামি হিসেবে ওই ইউপি চেয়ারম্যানরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছেন আত্মগোপনে। তাদের আত্মগোপনে থাকায় ইউপির স্বাভাবিক কার্যক্রমে সৃষ্টি হয়েছে অচলাবস্থা।
আত্মগোপনে থাকা চার চেয়ারম্যান হলেন- উপজেলার ৭ নম্বর রাজঘাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিজয় বুনার্জী, ৮ নম্বর কালীঘাট ইউপি চেয়ারম্যান প্রাণেশ গোয়ালা, ২ নম্বর ভুনবীর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রশিদ এবং ৬ নম্বর আশীদ্রোন ইউপি চেয়ারম্যান রনেন্দ্র প্রসাদ বর্ধন জহর।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে ছয়টিতে নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা। বাকি তিনটি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
গত মঙ্গলবার ওই চারটি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়গুলোতে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ৭ নম্বর রাজঘাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিজয় বুনার্জী ছাড়া বাকি তিন চেয়ারম্যানদের পরিষদ কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। তবে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনজনেরই ফোন সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলার ২ নম্বর ভুনবীর ইউনিয়নের রস্তমপুর গ্রামের মিতালী বলেন, ছোট ভাইয়ের ছেলের জন্ম নিবন্ধন করতে ছয় দিন ইউনিয়ন পরিষদে এসেছি। এখনো জন্ম নিবন্ধন সনদ হাতে পাইনি।
ওই ইউনিয়নের সচিব রবীন্দ্র চন্দ্র দেব বলেন, ‘চেয়ারম্যান সাহেব মাঝে মধ্যে আসেন। তিনি অসুস্থ। মাঝে মধ্যে বিকেলে এসে অফিস টাইমের শেষদিকে কাগজপত্রে স্বাক্ষর দিয়ে চলে যান।’
৬ নম্বর আশীদ্রোন ইউনিয়নের বাসীন্দা সুমন বলেন, এক জন্ম নিবন্ধন করতে পনেরো দিন ধরে ইউনিয়ন পরিষদে এসেছি। এখনো জন্ম নিবন্ধন সনদ হাতে পাইনি। ৫ আগস্টের পর থেকে ইউনিয়ের চেয়ারম্যানকে আর দেখিনি।
ওই ইউনিয়নের সচিব দীপক কুমার বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব মাঝে মাঝে আসেন অফিস টাইমের শেষদিকে এসে কিংবা আগে কাগজপত্রে স্বাক্ষর দেন। ওনার বিরুদ্ধে মামলা আছে ওনি সামাজিক ভাবে কম আসেন।
৭ নম্বর রাজঘাট ইউনিয়ন পরিষদের রাজঘাট চা-বাগানের শ্রমিক মিলন বলেন, ‘আমাদের চেয়ারম্যান সব সময় আসতেছে আমরা পাই তেমন সম্যসা হচ্ছে না ।’
ওই ইউনিয়ন পরিষদের সচিব নারায়ণ চন্দ্র গোস্বামী বলেন, ‘চেয়ারম্যান সাহেব পরিষদে আসেন। কাজ কর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন আমাদের ইউনিয়নে কোনো অসুবিধা হয়নি।
৭ নম্বর রাজঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিজয় বুনার্জী বলেন, আমি আমার ইউনিয়নে আসি অফিস করি জনগনকে সেবা দিয়ে যাচ্ছি আমাকে জনগণ অনেক ভালোবাসে তাদের ভালোবাসায় আমি আছি।
৮ নম্বর কালীঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সঞ্জয় নায়েক বলেন, ‘চেয়ারম্যান সাহেব রেগুলার পরিষদে আসেন না। মানুষের নানাবিধ সনদের আবেদন আমরা সংগ্রহ করে রাখি। যেদিন চেয়ারম্যান সাহেব আসেন সেদিন আমরা স্বাক্ষর নিয়ে মানুষকে দেই।’
২ নম্বর ভুনবীর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রশিদ, ৬ নম্বর আশীদ্রোন ইউপি চেয়ারম্যান রনেন্দ্র প্রসাদ বর্ধন (জহর) ও ৮ নম্বর কালীঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রাণেশ গোয়ালার মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, ‘পরিষদের চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিতির বিষয়টি কেউ আমাকে লিখিত বা মৌখিকভাবে জানাননি। তবে ৬ নম্বর আশীদ্রোন ইউপি চেয়ারম্যান বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ এসেছে বিষয়টি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে জানিয়েছি। আর যদি কোনো ইউনিয়নের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাই বিষয়টি খতিয়ে দেখব এবং আমরা ব্যবস্থা নিব। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’