পবিত্র মাহে রমজানের বিদায়ের পথে জমজমাট হয়ে উঠেছে কুমিল্লার লাকসামের ঈদবাজার। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শহরের প্রধান বিপণিবিতানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এবারের ঈদ বাজারে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার পোশাক বিক্রির লক্ষ্য নিয়ে তারা বেচা-বিক্রি করছেন।
এবার বাজারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো দেশীয় পোশাকের আধিপত্য। অন্যান্য বছর ভারতীয় সিরিয়াল ও নায়িকাদের নামে বিভিন্ন পোশাক জনপ্রিয় হলেও এবার বাজারে সেগুলোর তেমন উপস্থিতি নেই। ফলে ভিনদেশীয় পোশাষাকের পাশাপাশি দেশীয় ডিজাইনের পোশাকের বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, লাকসাম পৌর শহরের হাজী মোকছেদ আলী টাওয়ার, আলহাজ চাঁন মিয়া টাওয়ার, পাইওয়ানিয়ার সুপার মার্কেট, বিএস টাওয়ার, ভূঁইয়া টাওয়ার, রেডিমেট সেন্টার, স্টাইল, এবি টাওয়ারসহ অন্যান্য শপিং সেন্টারে সকাল থেকে রাত অব্দি পছন্দের পোশাক ও ঈদ অনুষঙ্গ খুঁজে বেড়াচ্ছে ক্রেতারা।
ফলে তাদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিক্রেতাদের। এসব মার্কেটে পুরুষ ক্রেতার চেয়ে নারী ক্রেতার সংখ্যা অনেক বেশি। তারা পছন্দের পোশাক কিনতে ঘুরছেন এক মার্কেট থেকে অন্য মার্কেটে।
হাজী মোকছেদ আলী টাওয়ারের ট্রাস্ট ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী এটিএম শওকত হোসেন বিপ্লব দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে জানান, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পুরুষ ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে প্রতিবারের মতো এবারেও ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের পাঞ্জাবির সমাহার রেখেছি।
আমরা প্রতিবছর কাপড়ের মান ঠিক রেখে নতুন নতুন ডিজাইনের পাঞ্চাবি বিক্রি করে থাকি। নিত্যনতুন ডিজাইন এবং মানসম্মত কাপড় হওয়ায় আমাদের বেচা-বিক্রিও ভালো হয়।
এদিকে গরমকে সামনে রেখে তরুণীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে থ্রি-পিস, লেডিজ টপস, বিভিন্ন ডিজাইনের কুর্তি-প্যান্ট, শাড়িসহ বাহারি ডিজাইনের দেশিয় পোশাক।
তরুণীদের পোশাক দেড় হাজার থেকে শুরু করে দশ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। ছোটদের পোশাকেও রয়েছে ভিন্নতা। মেয়ে শিশুদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে লং ফ্রক ও পার্টি ফ্রক।
এ ছাড়া মার্কেটগুলোতে উঠেছে লেহেঙ্গা ও লং কামিজেরও চাহিদাও রয়েছে। ছেলে শিশুদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে সুতি টি-শার্ট ও বেবি স্যুট। এ ছাড়া বিভিন্ন ডিজাইনের প্যান্ট।
নারীদের জন্য আছে সারারা, গারারা, নায়রা ও গাউন, থ্রি-পিস, লেডিজ টপস, বিভিন্ন ডিজাইনের কুর্তি-প্যান্টসহ বাজেটের মধ্যে পোশাক। পোশাকের দাম ধরা হয়েছে ১৫০০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।
তবে ২-৪ হাজার টাকার মধ্যেই ভালো মানের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে, যা ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে রয়েছে।
অন্যদিকে প্রসাধনী আইটেমের দোকানে ঈদকে কেন্দ্র করে ইফতারের পর থেকেই বাড়ছে ক্রেতার সমাগম। এখানকার শপগুলোতে প্রসাধনীর মধ্যে বিশেষ করে বাহারি ডিজাইনের চুড়ি থেকে শুরু করে জুয়েলারি আইটেম বিক্রি বেড়েছে অনেক গুণ।
তরুণ যুবকদের পছন্দের তালিকায় জগার্স প্যান্ট, শার্ট ও গেঞ্জির চাহিদা বেশি। এছাড়া পাঞ্জাবি পায়জামাও বিক্রি হচ্ছে। ঈদকে কেন্দ্র করে দৈনিক গড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত। সামনে আরও বাড়বে বলে বিক্রেতারা আশা প্রকাশ করেন।
নাঙ্গলকোট থেকে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা এক দম্পতির সঙ্গে কথা হয় দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ প্রতিবেদকের।
এই দম্পতি জানান, সন্তানদের জন্য পোশাক কিনতে এসে দেখছেন ২ হাজার টাকার নিচে ভালো মানের পোশাক পাওয়া কঠিন।
পরিবারের কর্তা জানান, পরিবারকে খুশি করতে চাই, কিন্তু গত বছরের তুলনায় পোশাকের দাম ৩০০-৫০০ টাকা বেশি হওয়ায় বাজেটের সঙ্গে তাল মিলানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তবে কিছু ক্রেতা দাম বাড়লেও মানের কারণে সন্তুষ্ট।
বিপণিবিতানের পাশাপাশি শহরের ফুটপাতের দোকানগুলোতেও সমান ভিড়।
রিকশাচালক জহির জানান, পরিবারের জন্য পোশাক কিনতে এসেছি, কিন্তু বড় মার্কেটে দাম বেশি হওয়ায় ফুটপাত থেকেই কেনাকাটা করার চেষ্টা করছেন।
লাকসাম হকার্স মার্কেটের বিক্রেতা সুমন মিয়া জানান, শুধু স্বল্প আয়ের মানুষ না মধ্যবিত্তরাও আমাদের কাছ থেকে পছন্দের কাপড় কিনছেন। বিক্রিও বেড়েছে। তবে এবার ভিড় আগের তুলনায় বেশি।